অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা উপাখ্যান কি পূণ্যভুমি সিলেটেই ইতি ঘটবে? দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সব সময়ের সফল ওয়ানডে ক্যাপ্টেন কি সত্যিই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই শেষ সিরিজটি খেলবেন? আগামী ৬ মার্চ সিলেট স্টেডিয়ামে কি লাল সবুজ জার্সি গায়ে আর সবুজ টুপি পরে শেষবার টস করতে নামবেন মাশরাফি?
এ মুহূর্তে দেশের সব ক্রিকেট অনুরাগির প্রশ্ন সেটাই। আসলে ইস্যুটি বেশ স্পর্শকাতর এবং এটা নিয়ে যত কথা-বার্তা বোর্ডের অভ্যন্তরে। যার ঢেউ ক্রিকেট পাড়ায় সেভাবে আছড়েও পড়েনি। তাই জল্পনা-কল্পনার ফানুস বাতাসে ভাসেনি তেমন। তবে ভেতরের খবর, দুটি ইস্যুই বিসিবির শীর্ষ কর্তা ও নীতি নির্ধারনী মহলে আলোচিত হচ্ছে।
এর মধ্যে মাশরাফি ইস্যু নিয়ে এইতো ৪৮ ঘণ্টা আগে কথা বলেছেন নাজমুল হাসান পাপন। বাংলাদেশ যেদিন জিম্বাবুয়েকে টেস্টে হারালো সেদিন (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিসিবি প্রধানের মন্তব্য মাশরাফি ইস্যুতে এনেছে নতুন মাত্রা। তার দাবি, প্রচার মাধ্যম তাকে উদ্ধৃত করে অধিনায়ক মাশরাফির ক্যারিয়ার ইতির যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা সঠিক নয়।
বিসিবি প্রধানের দাবি, তিনি কখনো বলেননি যে সিলেটেই শেষ সিরিজ খেলবেন অধিনায়ক মাশরাফি। মিডিয়ায় তার ব্যাখ্যা ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মাশরাফি জিম্বাবুয়ের পর আগামীতেও অধিনায়ক থাকবে কি থাকবে না? তা বিসিবি পরিচালক পর্ষদের পরের সভায় ঠিক করা হবে।’
তার মানে তিনি মাশরাফির অধিনায়ক থাকা না থাকার বিষয়টি বোর্ড পরিচালকদের ওপর ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন। বোঝাই যাচ্ছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের পর হবে সেই বোর্ড সভা। সেখানে মাশরাফির পারফরমেন্স নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। অধিনায়ক ও পারফরমার মাশরাফি সাফল্যের সাথে উৎরে গেলে হয়ত অধিনায়ক পদে বহাল থাকবেন আরও কিছুদিন।
কারণ, সাকিব যেহেতু সাসপেন্ড, তাই ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে ভাল বিকল্পও নেই তেমন। ঘুরেফিরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই ভরসা। তাই মাশরাফিকে আরও কিছুদিন রেখে দেয়া যায় কি না? এমন চিন্তাও আছে বোর্ড কর্তাদের মাথায়।
মাশরাফির অধিনায়কত্ব আরও একটি বিশেষ কারণে আরও দীর্ঘ হতে পারে। সেটা যতটা ক্রিকেটীয়। তার পাশাপাশি বাণিজ্যিকও। জানা গেছে, বাংলাদেশের টিম স্পন্সরের মূল্যটা হঠাৎ কমে গেছে। মাঝে মোবাইল অপারেটর হাউজ ‘রবি’ আর ‘লাইফবয়’ চড়া মূল্যে টিম বাংলাদেশের স্পন্সর হয়েছিল।
কিন্তু এখন বারবার বিজ্ঞাপন দেয়ার পরও সেভাবে কোন বড়সড় করপোরেট হাউজ নাকি এগিয়ে আসছে না। জানা গেছে, সাকিব সাসপেন্ড। মাশরাফিও আর অধিনায়ক থাকবেন না- এটা জেনে ও বুঝে নাকি থমকে দাঁড়িয়েছেন আগ্রহী টিম স্পন্সররা।
তাদের ভাবটা এমন, যদি মাশরাফি অধিনায়ক না থাকেন, তাহলে দলের তারকামূল্য যে আরও কমে যাবে। এমনিতেই বিশ্বসেরা ও ‘চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার’ সাকিব আল হাসান নেই। তার সাথে মাশরাফি না থাকার অর্থ, টিম বাংলাদেশে তারকা স্বল্পতা নেমে আসবে।
দল যেমনই খেলুক না কেন, বাণিজ্যিক দিক থেকে তারকা মূল্যও অনেক। সাকিব আর মাশরাফি অনেক বড় তারকা। বড় ‘ব্র্যান্ডও’। তাদের ছাড়া টিম বাংলাদেশের স্পন্সরশিপের মূল্য কিছু কমতেই পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আর মাশরাফিই সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। ওই দুই তারকার কেউ না থাকার অর্থ বাংলাদেশের টিম স্পন্সরের মূল্যও কমে যাওয়া।
কাজেই মাশরাফি এখন অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ালে ওই তারকা ঘাটতি দেখা দেবে। তাতে করে টিম স্পন্সর মূল্য কমে যেতে পারে বেশ খানিকটা। বিসিবিকে তাও খুব খুঁটিয়ে দেখতে হচ্ছে। মাশরাফি ওয়ানডে অধিনায়ক থাকলে অন্তত কিছুটা ঘাটতি পূরণ হবে। তেমন ভাবনাও ভাবতে হচ্ছে বিসিবিকে। তাই মাশরাফি অধিনায়ক ইস্যু এখন শেষ নাও হতে পারে।
এআরবি/আইএইচএস/এমকেএইচ