নাটোরে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীরা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা না মেনে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিদেশফেরত এসব ব্যক্তি হাট-বাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁ, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে, জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্তি পেয়েছেন সাতজন। তারা এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।
জেলা প্রশাসন বিষয়টি অবগত হয়ে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে একজনকে জরিমানা করা হয়েছে। সতর্ক করে দেয়া হয়েছে পাঁচজনকে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ নিয়ম না মানলে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের জানাতে বলা হয়েছে।
প্রশাসন বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নাটোর জেলায় নতুন করে আরও ৩০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। নাটোর সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, বিদেশফেরত আরও ৩০ জনকে নতুন করে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। এছাড়া আগের ২৭ জনের মধ্যে মেয়াদ পার হওয়ায় সাতজনকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। এনিয়ে বর্তমানে জেলায় ৫০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান জানান, নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। যাতে কেউ আক্রান্ত হলে তা ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত শুধুমাত্র সিংড়া উপজেলায় ১৮৮ প্রবাসী এলাকায় ফিরেছেন। তাদের মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন মাত্র ছয়জন। এসব কারণে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক দেখা দিচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় টিম করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিয়ে সতর্ক করছেন। তারা বলছেন, নিয়ম না মানলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শুক্রবার সিংড়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এনামুল হক নামে এক প্রবাসীকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শওকত মেহেদী সেতু ও আবু হাসান জানান, বিশেষ সতর্কতার অংশ হিসাবে সবাই কোয়ারেন্টাইনে ঠিকঠাকভাবে আছেন কি-না, তা নজরদারি করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের আলাইপুর এলাকায় জনসচেতনতা গড়ে তুলতে মসজিদের ইমাম ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। সম্প্রতি ওই এলাকায় ইতালিফেরত এক ব্যক্তি গা-ঢাকা দিয়েছেন। এছাড়া সদরের লক্ষ্মীপুর টলটলিয়া গ্রামে গিয়ে মালয়েশিয়া-ফেরত জাকির মিয়ার স্বজনদের সতর্ক করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে জাকির মিয়া মালয়েশিয়া থেকে ফিরে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যান। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে জাকির মিয়াকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখাসহ নজরদারি করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এছাড়া শুক্রবার সকালেও শহরের দিঘাপাতিয়া ও উত্তর চৌকিরপাড় এলাকা পরিদর্শন করে বিদেশফেরত ব্যক্তিরা ঠিকঠাক মতো হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন কি-না, তা নজরদারি করা হয়। পরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর করোনা-সতর্কতার অংশ হিসেবে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু হাসান।
সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান বলেন, হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মানছেন না- এমন সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করছি।
জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, আমরা এ বিষয়ে তৎপর রয়েছি। প্রবাসীরা নিয়ম মেনে চলছেন কি-না, সে বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধিসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার করা হচ্ছে। এ কাজ অব্যাহত থাকবে।
রেজাউল করিম রেজা/এমএআর/বিএ