জাতীয়

মানুষ বের হচ্ছে রাস্তায় : পুলিশও ঠেকাতে তৎপর

‘আপনার অসুস্থ বাবাকে আনতে যাবেন ভালো কথা, আপনি একা যান, কিন্তু গাড়ি ভর্তি মানুষ নিয়ে আপনি যেতে পারবেন না। হয় সবাইকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একা যান, আর তা না হলে বাসায় ফিরে যান।’

আজ বুধবার বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় নিউমার্কেটের বলাকা সিনেমা হলের সামনে একটি প্রাইভেট গাড়ির মালিককে উদ্দেশ করে এ কথা বলছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। এ সময় গাড়ির মালিক পুলিশ কর্মকর্তাকে নানাভাবে বোঝাতে চাইছিলেন যে, তার বাবা গ্রামে অসুস্থ, তাই তিনি তাকে চিকিৎসার জন্য গ্রাম থেকে নিয়ে সপরিবারে রওনা হয়েছেন। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তার এক কথা। এক সঙ্গে এত মানুষ মুভ করতে পারবেন না। এ নিয়ে দুজনের মৃদু তর্কবিতর্কও হলো।

একই সময় পাশেই আরও একটি দামি ব্রান্ডের গাড়ির মালিককে থামিয়ে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা জানতে চান, ঘর থেকে বের না হওয়ার ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও কেন রাস্তায় বের হয়েছেন, এ প্রশ্নের জবাবে ওই মালিক জানান, তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে তাকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে যেতে হবে।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হতাশা ও কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালি, চীন ও ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দেখেও আমাদের জনগণের টনক নড়ছে না। মাত্র কয়েকদিন ঘরবন্দি থেকেই তারা বেপরোয়া হয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। বুঝতে পারছি না, আমাদের আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কম বলেই কি ধরেই নিয়েছেন যে আমরা ঝুঁকিমুক্ত। এটা ভাবা ভুল হচ্ছে। এর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্য়ন্ত রাজধানীর ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, লালবাগ ও রমনা থানা এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলি ঘুরে মানুষের মধ্যে নানা অজুহাতে ঘরের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও প্রধান প্রধান সড়কে অনেককেই প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও রিকশাযোগে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। পুলিশও তাদের ঠেকাতে বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। অধিকাংশ মানুষকেই হাসপাতাল, ব্যাংক, ফার্মেসি বা বাজারে যাচ্ছেন বলে সাফাই গাইতে দেখা যায়। সন্তোষজনক জবাব না পেলে পুলিশকে গাড়ি ও মোটরসাইকেল আটকে রাখতেও দেখা গেছে। সেনাবাহিনী সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেলেও তাতেও বিকার নেই মানুষের।

বিশেষ করে পুরান ঢাকার লালবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় মুদি দোকান, কনফেকশনারি বা ফলমুলের দোকানের সামনে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী তরুণদের আড্ডা মারতে দেখা যায়। তাদের বাইরে থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, ঘরে বন্দি থেকে দম বন্ধ হয়ে যায়্। তাই বন্ধুদের সাথে কিছুটা সময় আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরে যান।

এমইউ/এনএফ/পিআর