কোনো ধরনের চিকিৎসা না পাওয়ার স্বাস্থ্যগত চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যেই খুলে দেয়া হলো সবকিছু। ফলে বাড়ছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। এদিকে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ও শনাক্তের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। দেশে আগের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯)। এতদিন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ ২৮ থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় তা এক লাফে বেড়ে ৪০ হয়েছে। ফলে ভাইরাসটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৫০ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৫৪৫ জন। এটিও একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৪৭ হাজার ১৫৩।
গতকাল রোববার (৩১ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি নতুন যুক্ত দুটিসহ মোট ৫২টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ২২৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো তিন লাখ আট হাজার ৯৩০টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরও দুই হাজার ৫৪৫ জনের দেহে। এটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। ফলে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭ হাজার ১৫৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ৪০ জনের। এটি এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানির রেকর্ড। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৫০ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৪০৬ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল নয় হাজার ৭৮১ জনে।
আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে বাড়ছে সেখানে লকডাউন তুলে দেয়া নেয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ। বলা যায় মানুষজন দিশেহারা। অর্থনীতি সচল রাখার অজুহাত দিয়ে সবকিছু খুলে দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, জীবন আগে না জীবিকা? জীবনই যদি না থাকে তাহলে জীবিকা কার জন্য। আর বাস্তবতা হচ্ছে লকডাউন তুলে দেয়ায় সংক্রমণ বাড়বে। কিন্তু সে তুলনায় চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়েও মানুষজনকে পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে।
দুই মাস ধরে সাধারণ ছুটি চলল। এই সময়ে উচিত ছিল চিকিৎসার পরিধি ও সক্ষমতা বাড়ানো। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। মরণঘাতী ছোঁয়াচে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পড়তে হচ্ছে দারুণ বিপাকে। এ যেন মৃত্যুর কাছে অসহায় আত্মসমর্ম্পণ। অথচ চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার মৌলিক। যেকোনো নাগরিকের যেকোনো ধরনের রোগের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
করোনাভাইরাসের দোহাই দিয়ে কোনো রোগেরই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। অনেক হাসপাতালের বেড খালি। কিন্তু সেখানে করোনাভাইরাসের রোগীদের ভর্তি করাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ হাসপাতাল ও হাসপাতাল করতে গিয়ে মাঝপথেই মারা যাচ্ছে রোগী। এরচেয়ে অসহায় অবস্থা আর কী হতে পারে।
মহামারি এ দুর্যোগে কোনো মন্ত্রণালয়, সরকারের হিরোইজমে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। একজনের দায় অন্যের কাঁধে চাপানোরও উপায় নেই। ‘সবধরনেরে প্রস্তুতি আছে’ বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কোনো সুযোগ নেই। বাস্তবতা স্বীকার করুন। সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করুন। মানুষকে যখন ঘর থেকে বের করেছেন তখন তাদের সব ধরনের চিকিৎসা নিশ্চিত করুন। একটি জীবনও যদি অবহেলায়, অব্যবস্থাপনায় হারিয়ে যায়- তার দায় কিন্তু সংশ্লিষ্ট কেউ এড়াতে পারবেন না।
এইচআর/বিএ/পিআর