লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনায় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানায় তিন মানবপাচারকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সোমবার (১ জুন) দুপুরে লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের গুলিতে নিহত মুকসুদপুর উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের সুজন মৃধার বাবা কাবুল মৃধা বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলায় মানবপাচারকারী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের ওসমান শেখের ছেলে লিয়াকত শেখ ওরফে লেকু শেখ (৪৫), একই উপজেলার যাত্রাবাড়ী গ্রামের মৃত রজব আলী মোড়লের ছেলে রব মোড়ল (৪৫) ও মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সত্যবর্তী গ্রামের আব্দুল মজিদ সরদারের ছেলে জুলহাস সরদারকে আসামি করা হয়েছে ।
মামলার বাদী কাবুল মৃধা জানান, গত ১ জানুয়ারি তার ছেলে সুজন মৃধা ও ভাগনে ফরিদপুরের সালথা থানার আলমপুর গ্রামের কবির শেখের ছেলে কামরুল শেখকে ৮ লাখ টাকা ও মুকসুদপুর উপজেলার সুন্দরদি গ্রামের কালাম শেখের ছেলে ওমর শেখকে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে লিবিয়া পাঠিয়ে ভালো বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখান রব মোড়ল । এতে সম্মত হয়ে ১৫ জানুয়ারি তিনি ২ লাখ ৫০ হাজার ও কালাম শেখ ৫০ হাজার টাকা রব মোড়লকে দেন। পরে রব মোড়ল অপর দুই আসামির কাছে এ টাকা পৌঁছে দেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি আসামিরা লিবিয়া পাঠানোর উদ্দেশ্যে সুজন মৃধা, কামরুল শেখ ও ওমর শেখকে বাড়ি থেকে ঢাকায় নিয়ে যান।
এরপর ভারত থেকে দুবাই, কুয়েত ও মিশর হয়ে তাদের লিবিয়া পাঠানো হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি আসামিদের ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়। লিবিয়া যাওয়ার এক মাস পর চুক্তি ভেঙে লিবিয়ার বেনগাজীর মিজদাহ শহরে নিয়ে সুজন, কামরুল ও ওমর শেখকে আটক করা হয়। পরে মুক্তিপণের দাবিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে মানবপাচারকারী চক্র। তারা সুজন মৃধা, কামরুল শেখ ও ওমর শেখের পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে নির্যাতনের ভয়েস ম্যাসেজ তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
নির্যাতনের বিষয়টি তিন আসামিকে জানালে তারা দাবিকৃত টাকা না দিলে কিছুই করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। এরপর গত ২৮ মে সুজন মৃধা ও কামরুল শেখসহ ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় ওমর শেখ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন।
মুকসুদপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা আবুল কালাম আজাদ জানান, লিবিবায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ আসামিদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে । কিন্তু আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
আরএআর/এমকেএইচ