চুক্তির পরও চলতি মৌসুমে সরকারকে বোরো চাল সরবরাহে গড়িমসি ও দাম বাড়ানোর দাবি তোলা চালকল মালিকদের (মিলার) প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সরকারি সংগ্রহের ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে মন্ত্রী মিলারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার রাস্তার দিকে যেতে বাধ্য করবেন না।
বুধবার (১৭ জুন) মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন থেকে বোরো সংগ্রহসহ বিভিন্ন বিষয়ে বরিশাল বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে খাদ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ৮ লাখ টন ধান এবং মিলারদের কাছ থেকে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বোরো ধান গত ২৬ এপ্রিল থেকে কেনা শুরু হয়েছে। ৭ মে থেকে শুরু হয়েছে চাল সংগ্রহ। ধান-চাল সংগ্রহ শেষ হবে আগামী ৩১ আগস্ট।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল, ৩৫ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কেনা হচ্ছে।
চালকল মালিকদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসুন; প্রতিবছর সমান লাভ হয় না। এবার করোনার সময়ে মানুষকে সেবা করার উপযুক্ত সময়, সেবার মনমানসিকতা নিয়ে আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। আপনারা সরকারের তালিকাভুক্ত। সব সময় সরকার আপনাদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করে এবং এবারও আপনারা সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
চালকল মালিকদের চুক্তি অনুযায়ী সঠিক সময়ে চাল দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিচ্ছে। অতএব সেই প্রণোদনার অংশীদারিত্বের সুযোগ আপনারাও নিতে পারবেন। কোনোভাবেই সরকারিভাবে চালের মূল্য বৃদ্ধি করা হবে না।
মন্ত্রী বলেন, যেহেতু খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতরের সঙ্গে আপনাদের ব্যবসা সবসময় করতে হবে, অতএব লাভ বেশি হলে চাল সরবরাহ করবেন আর লাভ কম হলে চাল সরবরাহ করবেন না- এটা হতে পারে না। আমরা চাই না যে আপনাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা এবং মিলকে কালো তালিকাভুক্ত করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমাদেরকে সেই রাস্তায় যেতে বাধ্য করবেন না। আপনাদের অতি লোভের কারণে যদি সরকারকে আমদানিতে যেতে হয় তাহলে আপনাদের জন্য তা সুখকর হবে না।
ধান-চাল কেনায় কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চাল সরবরাহের সময় খাদ্য গুদামের নাম, তারিখ এবং কোনো খাতে (খাদ্যবান্ধব, ওএমএস, টিআর, কাবিখা) এটা স্পষ্ট স্টেনসিলের মাধ্যমে অমোচনীয় কালি দিয়ে লিখতে হবে।
ভিডিও কনফারেন্সে বরিশাল বিভাগের আওতাধীন প্রতিটি জেলার করোনা মোকাবিলা পরিস্থিতি, চলতি বোরো ধান কাটা-মাড়াই, সরকারিভাবে ধান চাল সংগ্রহসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন মন্ত্রী।
সভা সমন্বয় ও সঞ্চালনা করেন খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। ভিডিও কনফারেন্সে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী জেলার জেলা প্রশাসক এবং বরিশাল বিভাগের আওতাধীন প্রতিটি জেলার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা বক্তব্য রাখেন।
আরএমএম/এমএসএইচ/এমএস