‘পদ্মফুল’ গ্রামবাংলার মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি ফুল। একসময় বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামের নদ-নদী, জলাশয়ে আপনা-আপনি বেড়ে উঠতো মনোমুগ্ধকর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বাহক এ পদ্মফুল। কালের বিবর্তনে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনে হারিয়ে গেছে পদ্মফুলের সৌন্দর্যের লীলাভূমি। কিন্তু বর্তমানে কদর বাড়তে থাকায় দেশের কোথাও কোথাও এ পদ্মফুলের চাষ হতে দেখা গেছে। তেমনিভাবে শখের বশে পদ্মফুলের চাষ শুরু করেছেন যশোরের শার্শা উপজেলার বেড়ি নারায়ণপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম। প্রতিদিন শত শত উৎসুক এলাকাবাসীর পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন ভিড় করছে চাষি সিরাজুলের পদ্মপাড়ে।
নিজ খরচে চার বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর কেটে তিনি সেখানে দুর্লভ পদ্মফুলের চাষ করছেন। পুকুরভর্তি ফোটা পদ্মফুল এলাকাজুড়ে মনোরম পরিবেশের অবতারণা করেছে। দীর্ঘ আড়াই বছরের চেষ্টায় একটি মাত্র চারা বীজ দিয়ে আজ তিনি চার বিঘা জলাশয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন পদ্মফুল। তিলতিল করে জমতে থাকা স্বপ্ন যখন দানায় পরিপূর্ণ; ঠিক সেই সময় দেশে বিদ্যমান করোনাভাইরাসের নিষ্ঠুরতায় সিরাজুল ইসলামের সেই স্বপ্ন এবং আশা-ভরসা সম্পূর্ণ ধুলিসাৎ হতে চলেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চার বিঘা জলাশয়ে বিছিয়ে আছে হাজার হাজার পদ্মফুল। হালকা আভায় মৃদু মৌ মৌ গন্ধে পরিপূর্ণ গোটা জলাশয়। কেউ আসছে পদ্মফুলের সৌন্দর্য দেখতে। কেউবা আসছে শখ করে পদ্ম পাতা ও ফুল কিনতে। ফুল কিনতে আসা সোহেল রানা বলেন, ‘পদ্মফুল আগের মতো এখন আর দেখা যায় না। বহু যুগ পরে সিরাজুল ভাইয়ের মাধ্যমে আমরা আবার পদ্মফুলের দেখা পেলাম। তাই স্ত্রী-সন্তানদের জন্য পদ্ম পাতা ও ফুল কিনতে এসেছি।’
পদ্মফুল দেখতে আসা হাসমত ও ইয়াছিন বলেন, ‘আমরা এ উপজেলারই লোক। অনেক দূর থেকে এসেছি পদ্মফুল দেখতে। লোক মারফত খবর পেয়ে পদ্মফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি। অনেক ভালো লাগছে।’
পদ্মচাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ ২ বছরের চেষ্টায় আমি এ ফুল চাষে সফল হয়েছি। একবার ফুলের বংশ বৃদ্ধি হলে আর পেছনে তাকানো লাগে না। কোনো খরচ ছাড়াই পদ্মফুলের চাষ করে এক মৌসুমে লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। ফুলের ডাটা, পাতা, ফুল, কুঁড়ি ও ফলের আলাদা আলাদা চাহিদা আছে। দুঃখের বিষয়, এমন সময় আমার চাষের সফলতা এসেছে; যখন করোনাভাইরাসের মহামারী। তাই দূর-দূরান্ত থেকে কেউ ফুল কিনতে আসতে পারছেন না। সব মিলিয়ে সফলতার প্রথম মৌসুমেই বেচাকেনা কম হওয়ায় লাভ-লোকসানের হিসাব মেলাতে পারছি না। মৌসুম থাকতে থাকতে যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তবে কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখতে পারব।’
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৌতম কুমার শীল বলেন, ‘দেশে এবং দেশের বাইরে পদ্মফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ ফুলের চাষ ও ব্যবহার সঠিকভাবে করতে পারলে অনেকাংশে লাভবান হওয়া সম্ভব। কৃষি বিভাগ প্রতিটি চাষে এবং প্রতিটি কৃষককে সব সময় সুযোগ-সুবিধা দিতে প্রস্তুত। চাষি সিরাজুল ইসলাম আমার কাছে কোনো সহযোগিতা চাইলে সার্বিকভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করবো।’
মো. জামাল হোসেন/এসইউ/এএ/এমকেএইচ