সৈয়দ আরিফ হোসেন
Advertisement
বাঙালির জীবনের এক কঠিন অনিশ্চয়তা আর অন্ধকারাবৃত সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ঘর আলোকিত করে জন্ম নিয়েছিলেন ছোট্ট শিশু শেখ রাসেল।
সেইদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিল ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা চাচা বাসায়। বড় ফুফু ও মেঝ ফুফু মার সাথে। একজন ডাক্তার ও নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আবার জেগে ওঠে। আমরা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমন বার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেঝ ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখব। ফুফু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালোচুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড় সড় হয়েছিল রাসেল।’
শেখ রাসেল,জাতির পিতার কনিষ্ঠ সন্তান, পরিবারের সবচেয়ে আদরের সদস্য। ভালোবাসতেন সাইকেল চালাতে। সাইকেল চালিয়ে কখনো কখনো অদূরেই প্রিয় হাসু আপার বাসার নিচে গিয়ে বেল বাজাতেন। হাসু আপাও ক্রিং ক্রিং শব্দ শুনলেই বুঝতেন আদরের ভাইটি বেল বাজাচ্ছে। বেলকনিতে আসতেন। আদুরে ধমক দিতেন। ওরে দুষ্টু, মিরপুর রোডে যাবি না।
Advertisement
অবুঝ শিশু শেখ রাসেল। সত্যিকার অর্থে অবুঝ ছিলেন না। পাকিস্তানি পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনীর গাড়ি ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে দিয়ে গেলেই শিশু রাসেল চিৎকার করে বলতেন, ‘ঐ পুলিশ কাল হরতাল, জয় বাংলা’। নিশ্চয়ই স্বপ্নের ‘জয় বাংলা’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। বঙ্গবন্ধু কেন শেখ রাসেলের চোখ দিয়ে সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন? কী এমন সম্ভাবনা ছিল শেখ রাসেলের মাঝে?
ব্যক্তিগতভাবে আমি মানতে পারি না যে, শেখ রাসেল অবুঝ ছিলেন। তিনি ১০ বছরের শিশু ছিলেন, কিন্তু মস্তিষ্কের দিক দিয়ে তিনি অনেক রাজনীতি সচেতন ছিলেন। তাই এই ছোট্ট শিশুটিকেও খুনিরা বাঁচিয়ে রাখেনি, নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর রেসিডেন্ট পি. এ মুহিতুল ইসলামকে শিশু রাসেল ভীতসন্ত্রস্ত গলায় বলেছিলেন, ‘ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো?’ উত্তরে বললেন, ‘না ভাইয়া, তোমাকে মারবে না’। কারণ, মুহিতুল ইসলামও ভেবেছিলেন, নিশ্চয়ই খুনিরা ১০ বছরের এই শিশুটিকে হত্যা করবে না।
খুনি মেজর আজিজ পাশা ওয়্যারলেসে কথা বলছিলেন। পাশেই ‘মায়ের কাছে যাব’ বলে কান্নাকাটি করছিলেন শেখ রাসেল। বিরক্ত হচ্ছিলেন আজিজ পাশা। ল্যান্সারের এক হাবিলদারকে নির্দেশ দিলেন, শেখ রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাও। রাসেলকে দোতলায় নিয়ে যাওয়া হলো।
Advertisement
কিছুক্ষণ পরই গুলির আওয়াজ। হাবিলদার নিচে এসে আজিজ পাশাকে জানালেন, ‘স্যার, সব শেষ’। এভাবেই, শিশু রাসেলকে হত্যার মধ্য দিয়ে ৩২ নম্বরের বাড়িতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের সমাপ্তি ঘটানো হয়।
পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে যুগে যুগে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, কিন্তু এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড আর কখনই ঘটেনি। পরিবারের সকল সদস্যের লাশকে সামনে রেখে সর্বশেষ শেখ রাসেলকে হত্যা করা হয়েছে। এর চেয়ে নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা আর কী হতে পারে!
লেখক : সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।
এইচআর/পিআর