মুকুন্দিয়া মঠ, রাজবাড়ীর পরিচিত একটি নাম। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে দেড়শ বছরের পুরোনো এ স্মৃতি। ইতোমধ্যে ভেঙে পড়েছে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার ছোট মঠটি।
অভিযোগ রয়েছে, একটি চক্র মঠের চারপাশের মাটি খুড়ে নেওয়ায় ভেঙে পড়েছে ছোট মঠটি। হুমকিতে রয়েছে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো প্রায় ৭০ ফুট উচ্চতার বড় মঠটি। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি মাটি খোড়ার কথা অস্বীকার করে জানান, মঠে যাওয়ার জন্য তিনি মাটি কেটে রাস্তা তৈরি করে দিয়েছেন। বহু বছরের পুরোনো হওয়ায় ছোট মঠটি ভেঙে পড়েছে। তিনিও এর সংস্কার ও রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।
মুকুন্দিয়া মঠ রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের মুকুন্দিয়ায় অবস্থিত। এটি প্রায় দেড়শ বছর আগে জমিদার দ্বারকানাথ সাহা চৌধুরীর ছেলে ষড়জেন্দ্রনাথ বাবু তার মা-বাবার স্মৃতির উদ্দেশে তৈরি করেন। জেলা শহর থেকে মঠের দূরত্ব ১১ থেকে ১২ কিলোমিটার।
এদিকে বড় মঠটির নিচের স্তম্ভে লেখা রয়েছে ‘পরমারাধ্য পিতৃদেব দ্বারকানাথ সাহা চৌধুরী। জন্ম- ১২ জ্যৈষ্ঠ ১২৪৪, মৃত্যু- ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৩২২।’ এ ছাড়া সামনের অংশে একটি লেখা থাকলেও গাছের জন্য সেটি বোঝা যায়নি।
সরেজমিনে জানা যায়, পাঁচুরিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটি মঠ। পাশেই ভেঙে পড়ে আছে ছোট মঠটি। মঠের সামনে ও পেছনের অংশের দুই দিকেই খাল। এ ছাড়া দুই পাশ দিয়ে মঠে যাওয়ার জন্য রয়েছে কোনোরকম সরু রাস্তা। মঠের ভেতর ও আশেপাশে ময়লা-আবর্জনা এবং লতা-পাতায় ভরা। এ ছাড়া বড় মঠটির বিভিন্নস্থানে নেই পলেস্তরা, রয়েছে ফাটলের চিহ্ন। মঠটির ওপরে জন্ম নিয়েছে ছোট-বড় আগাছা।
জনশ্রুতি আছে, বড় মঠটির নিচে স্তম্ভের ওপর একটি সাদা পুতুল ছিল, কয়েকদশক আগে সেটির দেখা মিলেছে। কিন্তু এখন সেটির সন্ধান কেউ জানেন না। তবে অনেকেই বলছেন, জাদুঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পুতুলটি।
তখন মুকুন্দিয়া ছেড়ে সপরিবারে ভারত চলে যান জমিদারের উত্তরসুরীরা। থেকে যায় তাদের নামের ৭ একর জমি ও তৈরি করা দুটি মঠ। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে ওই সম্পত্তি দখল করে নেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এখন মঠের এক-দেড় শতাংশ জমি ছাড়া অবশিষ্ট নেই। নামে-বেনামে সম্পত্তি দখলে আছেন স্থানীয়রা। তবে দখলকারীরা বৈধভাবে দখলে আছেন বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে ছোট মঠটি ভাঙত না। এখনো বড় মঠটি আছে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আসেন মঠ দেখতে। তাই এ স্মৃতি রক্ষার্থে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। কারণ জমিদারের সব জমিই কারো না কারো দখলে আছে।
পাঁচুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী আলমগীর বলেন, ‘বাবুদের অনেক সম্পত্তি ছিল। সে সম্পত্তি কে কিভাবে খাচ্ছেন, তা আজও ভালোভাবে জানি না। এ সম্পত্তি এখন কী অবস্থায় আছে, তা জানার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছি। এ ছাড়া যে মঠটি আছে, সেটা সংস্কার করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।’
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুর রহমান বলেন, ‘জমিদার বা রাজারা চলে যাওয়ার পর ওই সম্পত্তির মালিক সরকার। কিন্তু কয়েকটি উপায়ে ওই সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানাধীন হতে পারে। যেমন বিএস রেকর্ডের মাধ্যমে বা ওই জমিদার বা রাজাদের থেকে নিজেদের নামে করিয়ে নেওয়া। এ ছাড়া অর্পিত সম্পত্তি আইনে একটি ট্রাইবুনাল হয়েছে, সেই ট্রাইবুনালের মাধ্যমে অনেকে রায় পেয়ে নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নিচ্ছেন।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাঈদুজ্জামান খান বলেন, ‘মুকুন্দিয়ায় একটি মঠ ভেঙে পড়ার বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেনেছি। মঠ সংস্কারের বিষয়টি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের। এটি তাদের নথিভুক্ত কি না সেটা জানা নেই। নথিভুক্ত থাকলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কাজ করবে। এ ছাড়া সম্পত্তির বিষয়টি অ্যাসিল্যান্ড অফিস ভালো বলতে পারবে।’
রুবেলুর রহমান/এসইউ/এমএস