ভূমিহীন ছিলেন স্বরজিৎ কুমার বিশ্বাস (৬০)। একখণ্ড জমি কিনে বাড়ি করেন। ১৩ বছর সেই বাড়িতে বসবাস করছেন। এখন সেখানে গরুর হাট বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে সরকার। কিন্তু টাকা গ্রহণ করেননি বাড়ির মালিক স্বরজিৎ। তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
ঘটনাটি ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু পৌরসভা এলাকার। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, অধিগ্রহণ করা জমি আবাসিক ও নিম্ন এলাকা হওয়ায় সেখানে পশুর হাট বসানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু যেহেতু জমিটি অধিগ্রহণের কাগজপত্র তৈরি হয়েছে। মামলাও চলছে। তাই এর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হুট করে অধিগ্রহণ বাতিল করা যাচ্ছে না।
স্বরজিৎ কুমার বিশ্বাস জানান, পেশায় তিনি একজন কৃষক। বাবা মৃত নৃত্য গোপাল বিশ্বাস মারা যাওয়ার পর ভিটেবাড়িও রেখে যাননি। সরকারি পরিত্যক্ত জমিতে চালা বেঁধে বসবাস করতেন। পরে পরিশ্রম করে অন্যের জমিতে কামলা দিয়ে কিছু টাকা জোগাড় করেন। সেই টাকা দিয়ে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে হরিনাকুণ্ডু মৌজায় ৩৯ শতক জমি কেনেন। সেই জমিতে একটি টিনশেড বাড়ি করেছেন। সেই বাড়িতে বসবাস করছেন।
বর্তমানে তার পরিবারে সদস্য সংখ্যা ১১ জন। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, চার ছেলে, এক পুত্রবধূ, দুই নাতি নিয়ে তার সংসার। বড় ছেলে বাবলু বিশ্বাস অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করেন। অন্য তিন ছেলে পড়ালেখা করছে।
তিনি জানান, তার ভিটেবাড়িটি ২০১০ সালে অধিগ্রহণের জন্য সরকারিভাবে নোটিশ দেয়া হয়। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, এখানে পশুর হাট করা হবে। পৌরসভার পক্ষ থেকে সেখানে পশুর হাট করা হবে বলে দেয়া হয়। তিনি ওই সময়ই এই অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেন। কিন্তু নিজে পড়ালেখা না জানায় কোনো কিছু বুঝতে পারেননি।
এক পর্যায়ে তাকে টাকা নিতে বলা হয়, কিন্তু তিনি টাকা নেননি। পরে কোনো উপায় না দেখে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
নিজের ভিটেবাড়ি ছাড়তে চান না স্বরজিৎ কুমার। এজন্য দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। জমিটির বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় জমিতে নতুন করে কোনো কাজ করতে পারছেন না। তার দাবি, তার কষ্টের ভিটেবাড়ি যেন কেড়ে নেয়া না হয়।
ওই জমিতে বর্তমানে চার কক্ষের একটি সেমিপাকা বাড়ি, দুটি রান্নাঘর, একটি গরুর ঘর, একটি পুকুর, নয়টি আম গাছ, তিনটি নারিকেল গাছ, তিনটি পেয়ারা গাছ, একটি লেবু গাছ রয়েছে। গরুর ঘরে ১৪টি গরু আছে। এসব নিয়ে তিনি ওই বাড়িতে বসবাস করেন। এ বিষয়ে হরিনাকুণ্ডু পৌরসভার বর্তমান মেয়র মো. শাহীনুর রহমান জানান, বর্তমান পৌরসভার আগেই এই জমিটি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তবে জমির মালিক টাকা গ্রহণ করেননি।
তিনি জানান, ওই স্থানে আরও কয়েকজনের জমি ছিল। সংখ্যালঘু এক ব্যক্তির জমি নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানে জায়গাটি যে অবস্থায় আছে তাতে সেখানে পশুহাট বসানো সম্ভব নয়। যে কারণে আগের জায়গাতেই হাট বসছে।
বিষয়টির একটা সমাধান হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন মেয়র।
হরিনাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাফিস সুলতানা জানান, বিষয়টি তার যোগদানের অনেক আগের ঘটনা। যে কারণে বিষয়টি তার জানা নেই। তবে জমির মালিক বিষয়টি অবহিত করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসআর/এমএস