সীমান্ত এলাকা থেকে আগত গবাদি পশু ও প্রাণীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার লক্ষ্যে গত তিন বছর আগে বিটুলি প্রাণিসম্পদ কোয়ারেন্টাইন নামে একটি স্টেশন গড়ে তোলা হয়। জনবল না থাকায় এখনো চালু করা হয়নি এ স্টেশনটি। ফলে জনগণ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
মৌলভীবাজার জেলার জুরী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের বিরইনতলা গ্রামে বিটুলি প্রাণিসম্পদ কোয়ারেন্টাইন স্টেশনের অবস্থান। কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ শতক জমির ওপর নির্মাণ করা হয় একটি একাডেমিক ও ডরমেটরি ভবন। ভবনের পাশেই একটি অ্যানিমেল শেডও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের অভ্যন্তরে অলস পড়ে রয়েছে পশু ও প্রাণীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ৫১টি যন্ত্রপাতি। এর মধ্যে অনেকগুলো প্যাকেট খুলে রাখা হয়েছে। তিন বছর ধরে ব্যবহার না হওয়ায় এগুলোতে জমে রয়েছে ধুলাবালি। নেই কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। দেখভালের জন্য রয়েছেন শুধু একজন আউটসোর্সিং নিরাপত্তা প্রহরী।
এছাড়া অ্যানিমেল শেডটিও অলস অবস্থায় পড়ে রয়েছে। শেডের ভেতরে পড়ে থাকা শিকল ও খাঁচায় জং ধরেছে। শেডের কক্ষগুলোও অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে আছে।
জুরী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সারাদেশে ২৪টি প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পের নাম করা হয় প্রাণী রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প। সে সময় দেশের ১৮টি স্থলবন্দর, দুটি সি-পোর্ট ও চারটি বিমানবন্দরে এই কোয়ারেন্টাইন স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রতিটি স্টেশনের জন্য তিনজন কর্মকর্তা ও নয়জন স্টাফ থাকার সুপারিশও করা হয়।
এসব কোয়ারেন্টাইন স্টেশন খোলার মূল লক্ষ্য ছিল, সীমান্ত দিয়ে আমদানিকৃত প্রাণী ও প্রাণিজাত পণ্য এবং প্রাণীর খাদ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভবন ও অ্যানিমেল শেড নির্মাণের পর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিটুলি কোয়ারেন্টাইন স্টেশনটি জুরী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ওই বছরই পশু-প্রাণী পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়।
এ সময় ল্যাবের জন্য পাঁচটি রোগ নির্ণয় পরীক্ষার কিট ক্রয় করা হয়। সেগুলো হলো- অ্যানথ্রাক্স, নিউক্যাসেল (রাণীক্ষেত), সালমন এক্সোসিস, ব্রুসেলোসিস ও কিউবার কুলোসিস। এছাড়া এখানের জন্য ক্রয় করা হয়েছে, ল্যাব ইনকিউবেটর, ওয়েট মেশিন, ডিজেল জেনারেটর, কলোনি কাউন্টার, ডিপ ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, পোস্ট মর্টেম সেট, বৈদ্যুতিক স্ট্যাবিলাইজার, ওয়াটার হিটার, থার্মো ফ্লাস্ক, ডিজিটাল ক্যামেরা, কম্পিউটার, কর্মকর্তার জন্য খাট, আলনা, আলমারীসহ ৫১টি পণ্য।
মৌলভীবাজারের বিটুলি ছাড়া সিলেটের সুতারকান্দি, জকিগঞ্জ, তামাবিল ও সিলেট এম এ জি ওসমানী বিমানবন্দরে আরও চারটি কোয়ারেন্টাইন স্টেশন রয়েছে। এখনও কোনোটিই চালু হয়নি বলে জানা যায়।
বিটুলি স্টেশনের আউটসোর্সিং নিরাপত্তা প্রহরী মোক্তার মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, তিন বছর ধরে এ ভবনটি আমি দেখাশোনা করছি। মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খোঁজ-খবর নিলেও এখন পর্যন্ত কেউ এখানে আসেননি। ক্রয় করা যন্ত্রপাতিগুলোও ব্যবহৃত না হওয়ায় ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এই কোয়ারেন্টাইন স্টেশনটির জন্য ২০ শতক জমি দান করেছিলেন বিরইনতলা গ্রামের বাদশা মিয়া। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কেন যে এই জমি আমি দান করেছিলাম তা বুঝে উঠতে পারিনি। তিন বছর ধরে এখানে কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এ ভবনের প্রধান গেট সবসময়ই তালাবদ্ধ থাকে। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেখা যায় না।
অবিলম্বে এ স্টেশনটি চালু হওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুক আহমদ বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কী তা আজও আমাদের বোধগম্য নয়। কারণ, এটি চালুই হয়নি। আমরা মনে করি, যেহেতু আমাদের এলাকা সীমান্তবর্তী, তাই স্টেশনের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এ স্টেশনটি চালু হলে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আগত পশু-প্রাণী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেশে প্রবেশের অনুমতি দিলে বিভিন্ন প্রকার রোগব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
তিনি আর বলেন, সরকার যে লক্ষ্যে স্টেশনটি নির্মাণ করেছে, এটি চালু না হলে তার সুফল জনগণ পাবে না। তা না হলে একসময় ভবনটি অকার্যকর হওয়াসহ যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুরী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. হাছিন আহমদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটি এখনো পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি। এখানে যে ল্যাব রয়েছে, তা পরিচালনার জন্য অদ্যাবধি জনবল নিয়োগ হয়নি। ফলে যে উদ্দেশ্যে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল, তা ব্যাহত হচ্ছে।
যদি অচিরেই এটি চালু করা যায়, তাহলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাওয়ার পাশাপাশি জনগণও উপকৃত হবে বলে জানান তিনি।
এসজে/জেআইএম