যুগ যুগ ধরে ঝুপড়ি ঘরে নাতি-নাতনীদের নিয়ে অতি কষ্টে বসবাস করে আসছেন রওশোনারা বেগম। সরকারের দেয়া একটি ঘর পেতে চেয়ারম্যান-মেম্বরসহ অনেকের কাছে ধর্না দিয়েছেন ৯০ বছরের এই বৃদ্ধা। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। তাই সেই ঝুপড়ি ঘরেই ঠাঁই এই অসহায় পরিবারের।
ঝালকাঠির রজাপুরের সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ আলগী গ্রামের ৫ নং ওয়ার্ডের মৃত সুলতান আকনের স্ত্রী রওশোনারা বেগম। ছয় বছর আগে মারা যান স্বামী। ছেলে মান্নান আকনকে নিয়েই থাকেন। তার আবার দুই সন্তান রয়েছে। সুমাইয়া (৫) ও ১১ মাসের সুলাইমান।
দিনমজুর ছেলে মান্নান আকন আবার অসুস্থ। তার শরীরে ছোট ছোট বলের মতো অসংখ্য টিউমার থাকায় রোদে কাজ করতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ বয়সে অন্যের ঘরে কাজ করতে হচ্ছে রওশোনারা বেগমকে।
বসতঘরের জমিটুকু ছাড়া অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই তাদের। তাই অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটে পরিবারটির। স্বামী মারা যাবার পর থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ অনেকজনের কাছে দৌড়ঝাঁপ করে করোনার শুরুর দিকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়ে ৪/৫ মাস আগে মাত্র এক কিস্তি ভাতা পেয়েছেন রওশোনারা।
এলাকার লোকজনের আর্থিক সহায়তায় তিন বছর আগে কম দামে কয়েকখানা টিন কিনে বাঁশ-খুঁটির উপরে চাপা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করেন। গত বর্ষায় শীলা বৃষ্টিতে টিন ছিদ্র হয়ে যায়। ভাঙ্গা বেড়া দিয়ে শীতের ঠাণ্ডা বাতাস প্রবেশ করে ঘরে। ফলে শীত-বৃষ্টি, অর্ধাহারে-অনাহারে কষ্ট করে দিন কাটাতে হচ্ছে পরিবারটিকে।
রওশোনারা বেগম বলেন, খাবারের অভাব খাকলেও খাবার চান না। অসুস্থ ছেলে, নাতি-নাতনী ও ছেলের স্ত্রীকে নিয়ে বসবাসের জন্য একটি ঘরের দাবি তার।
তিনি বলেন, শীতের ঠাণ্ডা বাতাস হু হু করে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে। অনেক কষ্ট করে থাকতে হয়। শুনছি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর অনেকেই পাচ্ছেন, কিন্তু মনে হয় সেই ঘর আমার ভাগ্যে নাই।
রওশোনারা বেগম জানান, একটি ঘর পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কাছে দৌড়ঝাঁপ করেও সুফল পাননি। স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং চেয়ারম্যানের কাছে একাধিকবার গেলেও তারা বলেন, তালিকায় নাম দেয়া হয়েছে, সরকার না দিলে কি করবেন? এমন কথা বলে ফিরিয়ে দেন।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মো. মাসুম মৃধা বলেন, আমি একাধিকবার তালিকায় নাম দিয়েছি। কিন্তু অজানা কারণে কর্তৃপক্ষ রওশোনারাকে ঘর দিচ্ছে না। সরকার ঘর না দিলে আমি কি করতে পারি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন জানান, খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। গৃহহীন সবাইকে পর্যায়ক্রমে ঘর দেয় হবে।
আতিকুর রহমান/জেডএইচ/এমএস