স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার ৩২ বছর পর ২০১১ সালে প্রগতিশীল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মহাজোট সরকারের সহযোগিতায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হয় একটি পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার। এটি দেশের ক্যাম্পাস ভিত্তিক সর্ববৃহৎ শহীদ মিনার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, শহীদ মিনারটি মূল বেদি থেকে ১১৬ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৭৫ ফুট প্রস্থে অবস্থিত। মাটির উপর থেকে মূল বেদি ৯ ফুট ওপরে। শহীদ মিনারটির পিলারের মাঝে স্টিলের এসএস পাইপ দিয়ে যুক্ত আছে। তিন পাশ দিয়ে ওঠার জন্য সুন্দর কারুকার্য খচিত সিরামিক ইট দিয়ে তৈরি সিঁড়ি রয়েছে। মূল বেদিতে খুব সহজে পঙ্গু ও প্রতিবন্ধীরা যাতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে পারেন সেজন্য র্যাম্প তৈরি করা হয়েছে।
শহীদ মিনারটির মূল আয়তন ৪০০/২০০ বর্গফুট। মূল এরিয়ার চতুর্দিক দিয়ে স্থায়ীভাবে বক্স লাইটিং ও সার্চ লাইটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। শহীদ মিনারটি পূর্ণাঙ্গভাবে নির্মিত করতে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রকৌশল অফিস। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের ৩০০ ফুট দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ছাত্রলীগসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা একটি পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার স্থাপনের জোর দাবি জানায়। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়। এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. এম আলাউদ্দিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বর্তমান পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন শহীদ মিনারের ইতিহাস বর্ণনা করে বলেন, এক সময় এই ক্যাম্পাসে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীরা শহীদ মিনারের ঘোর বিরোধী ছিল। বর্তমানে রবীন্দ্র-নজরুল কলা অনুষদের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটি খুঁটির মতো শহীদ মিনার ছিল, যেটা শহীদ মিনারের আঙ্গিকে নয়। সেখানে আমরা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। পরে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পরে ২০১১ সালে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করি। শহিদ মিনারটি আমাদের বড় গর্বের।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন বর্তমান রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আতাউর রহমান। শহীদ মিনারের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। তখন সেটি রবীন্দ্র-নজরুল কলা অনুষদের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত ছিল। শহীদ মিনার স্থাপনের নেপথ্যে সবচেয়ে অবদান রেখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। পরে বিভিন্ন বাঁধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আলাউদ্দিনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের দক্ষিণ প্রান্তে ক্যাম্পাস ভিত্তিক সবচেয়ে বড় শহীদ মিনার স্থাপিত হয়।
রায়হান মাহবুব/এসজে/এমএস