দেশজুড়ে

কলাগাছের শহীদ মিনারে শিশুদের শ্রদ্ধা

নিজ হাতে তৈরি কলাগাছের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছে শিশু-কিশোররা। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) একুশের প্রথম প্রহরে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া গ্রামে নিজেদের তৈরি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানায় শিশুরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের শিশু-কিশোররা কয়েকদিন ধরে কলাগাছ, ফুল ও কাগজ দিয়ে তৈরি করে শহীদ মিনার। রঙিন কালিতে লেখা, ‘অ, আ, ক, খ’, ‘২১ ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলাতে পারি’, ‘২১ আমার অহঙ্কার’। বেদীতে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে রঙিন কাগজের মালা আর গুচ্ছ-গুচ্ছ ফুল। স্থানটি মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রঙ-বেরঙয়ের কাগজে। নিজ হাতে তৈরি করা কলাগাছের শহীদ মিনারেই একে একে প্রবেশ করছে শিশু-কিশোররা। তখন তাদের প্রত্যেকের হাতে শোভা পাচ্ছিলো ফুল। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙনো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গান গাইতে গাইতে তারা শহীদ মিনারে যাচ্ছিলেন আর বেদিতে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছিলেন।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা জহিরুল ইসলাম হৃদয়, সাকিবুল ইসলাম, জাহিদ হাসান, রিফাত, তাওহীদুল ইসলাম বায়জিদ, সাকিল জানায়, আমরা ছোট। এতো বুঝি না। বড়রা বলে এদিনে কথার (ভাষার) জন্য সালাম, বরকত, রফিক, জব্বাররা শহীদ হয়েছেন। সবাই শহীদ মিনারে গিয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। আমরাও শ্রদ্ধা জানাবো। কিন্তু গ্রামে কোনো শহীদ মিনার নেই। এ জন্য আমরা মা-বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাঁশ, সূতো, আঠা, রঙিন কাগজসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করি। সেই শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

ফারজানা, মরিয়ম, কনা, জান্নাতি, মদিনা, আয়শা মনি, আশ্রাফুল, মাইনুল জানায়, সালাম, বরকত, রফিক, জব্বাররা ভাষার জন্য এদিনে জীবন দিয়েছেন বলে স্যারদের কাছে থেকে আমরা জেনেছি। তাই দিনটিতে আমারা সেই সব শহীদ প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্যোগ নেই। কিন্তু শহীদ মিনার না থাকায় নিজেরাই কলাগাছের শহীদ মিনার তৈরি করি এবং সেই শহীদ মিনারেই ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি।

ঝালকাঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘শহরের স্কুলগুলোতে শহীদ মিনার থাকলেও গ্রামীণ জনপদের অনেক স্কুলেই শহীদ মিনার নেই। যেসব স্কুলে শহীদ মিনার নেই সেসব স্কুলে শহীদ মিনার স্থাপন করার জন্য তালিকা তৈরি করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে শহীদ মিনার স্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে।’

ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা অফিসার মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘প্রত্যন্ত এলাকার অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। জেলার মাদরাসাগুলোতেও নেই কোন শহীদ মিনার। শহীদ মিনার স্থাপনের নতুন নির্দেশনা এসেছে। বরাদ্দ হলেই শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে শহীদ মিনার স্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে।’

মো. আতিকুর রহমান/ আরএইচ/এএসএম