চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে জাতিগত সংখ্যালঘু উইঘুর সম্প্রদায় এবং অন্যান্য তুর্কিভাষী মুসলিমদের ওপর দেশটির সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। সেখানে গণহারে আটক, নিপীড়ন-নির্যাতনসহ অন্যান্য অপরাধের জন্য বেইজিং দায়ী বলে উল্লেখ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
সংস্থাটি ৫৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গুম, নজরদারি, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে থাকা, চীনে ফিরতে বাধ্য করা, জোর করে কাজ করানো, যৌন হয়রানি ও সন্তান ধারণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করাসহ নানা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে এসব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
স্ট্যানফোর্ড ল’ স্কুলের হিউম্যান রাইটস এবং কনফ্লিক্ট রেজ্যুলেশন ক্লিনিকের সহায়তায় ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তুর্কিভাষী মুসলিমদের ওপর চীনের নির্যাতন নতুন কিছু নয় বরং এখন এই অত্যাচারের মাত্রা ‘অভূতপূর্ব মাত্রায়’ পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জিনজিয়াংয়ে রাজনৈতিক শিক্ষা শিবির, কারাগার সহ ৩শ থেকে ৪শ বন্দি শিবিরে প্রায় ১০ লাখ মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যাদের বাবা-মা এসব শিবিরে আছেন সেসব শিশুদের অনেককে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়েছে।
২০১৭ সাল থেকেই জিনজিয়াংয়ে অভিযান বাড়িয়েছে বেইজিং। চীনে বছরে যত মানুষকে গ্রেফতার করা হয় তার প্রায় ২১ শতাংশই জিনজিয়াংয়ে। অথচ চীনের মোট জনসংখ্যার মাত্র দেড় শতাংশ ওই প্রদেশে। গত পাঁচ বছরে সেখানে আগের পাঁচ বছরের তুলনায় গ্রেফতার বেড়েছে ৩০৬ শতাংশ।
২০১৭ সাল থেকে চীনা সরকার বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে সেখানকার দুই তৃতীয়াংশ মসজিদ ধ্বংস করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চীন বিষয়ক পরিচালক সোফি রিচার্ডসন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘পরিষ্কার ভাষায় বললে ধারাবাহিক ও বিস্তৃত আক্রমণের অংশ হিসেবে সেখানে বেসামরিক লোকজনের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো গুরুতর অপরাধ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে এগুলো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।’
এর আগে গত মার্চে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের হাজার হাজার উইঘুর এবং আরও নানা জাতিগত সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমাতে অভিনব পন্থা অনুসরণ করছে চীন। এসব সংখ্যালঘুদের নিজেদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে কাজের জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছে চীনা কর্তৃপক্ষ। ফলে উইঘুর এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের আদি আবাসভূমিতে তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
চীন সরকারের দাবি, গ্রামীণ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা বেকারত্ব এবং দারিদ্র দূর করার লক্ষ্যে মানুষের আয় বাড়াতেই এসব চাকরি ও বদলির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কিন্তু বিবিসির পাওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণে আভাস পাওয়া গেছে যে, এই নীতিতে জোর খাটানোর উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে এবং গত কয়েক বছরে জিনজিয়াং প্রদেশ জুড়ে যেসব শিবির গড়ে তোলা হয়েছে তার পাশাপাশিই এসব চাকরিগুলোর পরিকল্পনা করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের জীবনধারা ও চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনার জন্য।
টিটিএন/এমকেএইচ