বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. মামুন। থাকেন রাজধানীর রামপুরার একটি ভাড়া বাসায়। ব্যস্ত জীবনে খুব একটা বাজারে যাওয়ার সুযোগ হয় না তার। মাঝে মধ্যে সুপার শপ থেকে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করেন তিনি।
একদিন পরিচিত একজনের মাধ্যমে জানতে পারেন ঘরে বসেই অনলাইনে সব ধরনের কেনাকাটা করা যায়। বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্টে থেকে যেমন ফাস্টফুড কেনা যায়, তেমনি বিভিন্ন সুপার শপ থেকে চাল, ডাল, তেল, মাছ, মাংস থেকে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা যায়।
এরপর মোবাইলে ফুডপান্ডার অ্যাপ ডাউনলোড করেন ওই চাকরিজীবী। এই অ্যাপ ব্যবহার করে তিনি যেমন ঘরে বসেই সব নিত্যপণ্য কিনতে পারছেন, তেমনি পাচ্ছেন নগদ ছাড়ও। ফলে একদিকে যেমন বাজারে গিয়ে বাজার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন, তেমন বাঁচছে অর্থ।
মামুন জাগো নিউজকে বলেন, শুক্রবার বিভিন্ন সুপার শপ বিভিন্ন ছাড় দেয়। যেমন স্বপ্ন শুক্রবার গরুর মাংসের কেজি বিক্রি করে ৫৬৫ টাকা। আমি নিজে গিয়ে কিনলে এই টাকায় দেয়া লাগে। কিন্তু ফুডপান্ডার মাধ্যমে কিনলে খরচ হয় ৪৮৪ টাকা। কারণ প্রতিষ্ঠানটি ডেলিভারি চার্জ ধরে ৯ টাকা, বিপরীতে একটি কোডের মাধ্যমে ৯০ টাকা ছাড় পাওয়া যায়। যতবার কেনা হয় ততবারই এই ছাড় দেয়া হয় এবং সবাই এই ছাড় পান।
তিনি বলেন, অ্যাপের মাধ্যমে কেনার কারণে একদিকে ৮১ টাকা সেভ হয়, অন্যদিকে কষ্ট করে সুপার শপে যাওয়া লাগে না। অর্ডার দেয়ার পর নিশ্চিন্তে ঘরে বসে পণ্য পাওয়া যায়। ডেলিভারিম্যান পণ্য বাসায় পৌঁছে দিয়ে টাকা নিয়ে যায়।
জুয়েল নামের আর একজন বলেন, খাবার ও পণ্য ভেলিভারি দেয়ার অ্যাপগুলো এখন জীবন অনেক সহজ করে দিয়েছে। এসব অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করা যাচ্ছে। আবার নিজে গিয়ে কিনলে যে টাকা খরচ হবে, তার থেকে কম টাকায় বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি নিজে গিয়ে মিঠাই থেকে এক কেজি দধি কিনেছি ২৭০ টাকা দিয়ে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখলাম ফুডপান্ডার অ্যাপ ব্যবহার করে সব খরচ দিয়ে ২০৯ থেকে ২২৯ টাকা দিয়ে মিঠাই থেকে এক কেজি দধি কেনা যায়।
কীভাবে কম দামে পণ্য পাওয়া যায় তার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ফুডপান্ডা একটি কুপন দেয়। এতে ছাড় দেয়া হয় ৫০ টাকা। আর বিকেল ৩টায় দেয়া কুপনে ছাড় আছে ৭০ টাকা। অ্যাপ ওপেন করলেই এই কুপন দেখা যায়। খাবার অর্ডার করার সময় এ কুপন বসালেই ছাড় পাওয়া যায়।
বনশ্রীর মিঠাইয়ের একটি স্টলের কর্মী সোহেল বলেন, আমরা আমাদের স্টাফদের ১০ শতাংশ ছাড় দেই। সেক্ষেত্রে আমাদের কর্মীরা এক কেজি দধি ২৪৩ টাকা দিয়ে কিনতে পারেন। কিন্তু ফুডপান্ডার অ্যাপ দিয়ে অনেকে এক কেজি দধি ২০৯ টাকায় পেয়ে যায়। কীভাবে ফুডপান্ডা এত ছাড় দেয় তা বলতে পারব না। তবে সম্প্রতি আমাদের স্টল থেকে ফুডপান্ডার খাবার নেয়ার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে।
শুধু স্বপ্ন বা মিঠাই না প্রায় সব ধরনের রেস্টুরেন্ট ও সুপার শপ থেকে কেনাকাটা করার জন্য এ ধরনের ছাড় দিচ্ছে ফুডপান্ডা। এর সঙ্গে অর্ডার করা খাবার বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে নিজে গিয়ে সংগ্রহ করার অপশনও রেখেছে তারা। ‘পিক আপ’ অপশনে যে এ ধরনের অর্ডার দিতে পারেন। এতে অতিরিক্ত ছাড় মেলে।
ক্রেতাদের বিভিন্ন ছাড় দেয়ার পাশাপাশি একটি বড় অংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করছে অনলাইনে খাবার ডেলিভারি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। শুধু একটা সাইকেল ও স্মার্টফোন থাকলেই একজন খাবার সরবরাহের এ পেশায় নেমে যেতে পারেন।
ফুডপান্ডার খাবার সরবরাহ করা আরিফ নামের একজন বলেন, আমি এক বছরের বেশি সময় ধরে এ পেশায় আছি। প্রতিদিন প্রচুর অর্ডার পাই। প্রতিটি অর্ডারের জন্য আমরা টাকা পাই। এতে আল্লাহর রহমতে ভালো আয় হয়। ঢাকায় নিজের খরচ জোগানোর করার পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতে পরিবারের জন্যও টাকা পাঠাতে পারছি।
সার্বিক বিষয়ে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে ফুডপান্ডাকে চারটি প্রশ্ন করা হয়।
প্রথম প্রশ্নটি ছিল- রমজান উপলক্ষে আপনারা বিভিন্ন অফার দিচ্ছেন। এতে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? এসব অফার দেয়ার উদ্দেশ্য কি?
উত্তরে ফুডপান্ডা জাগো নিউজকে বলে, গ্রাহকরা যাতে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী দামের মধ্যে খাবার ও মুদিপণ্য কিনতে পারেন, এজন্য ফুডপান্ডা নানা ডিসকাউন্ট ও অফার নিয়ে আসে। অফারের ক্ষেত্রে আমাদের গ্রাহকদের সাড়া বেশ ইতিবাচক।
দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল- লকডাউনের আগে গ্রাহকদের কাছ থেকে কেমন সাড়ে পেতেন? এখন কেমন সাড়া পাচ্ছেন? লকডাউনে গ্রাহক বেড়েছে না কি কমেছে?
এর উত্তরে ফুডপান্ডা বলে, লকডাউনে আমাদের প্ল্যাটফর্মে অর্ডারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তৃতীয় প্রশ্নটি ছিল- গ্রোসারি পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আপনার বিভিন্ন ছাড় দেন। এতে গ্রাহকরা প্রকৃত মূল্যের থেকে কম দামে পণ্য কিনতে পারেন। এতে আপনাদের লাভ কি?
এর উত্তরে ফুডপান্ডা বলে, আমরা বিভিন্ন অফার প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহক, ভেন্ডর ও রাইডারদের ক্ষমতায়নে মুদিপণ্যের পরিসর ডিজিটালাইজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
শেষ প্রশ্নটি ছিল- ‘পিক আপ’ বা অর্ডার দেয়া খাবার নিজে সংগ্রহ করার বিষয়ে আপনারা বিশেষ সার্ভিস চালু করেছেন। আপনাদের গ্রাহকদের কত শতাংশ এই সার্ভিস নিচ্ছেন? আপনাদের এই সার্ভিস চালুর উদ্দেশ্য কি?
এর উত্তরে ফুডপান্ডা বলে, গ্রাহকরা যাতে স্বল্প সময়ে অর্ডার করতে পারেন এবং তাদের লাইনে অপেক্ষা করতে না হয়, এজন্য ফুডপান্ডা পিক আপ সেবা নিয়ে এসেছে। এ সেবা গ্রাহকদের জন্য সময় সাশ্রয়ী এবং এর ফলে গ্রাহকরা চলার পথে কোনো ঝামেলা ছাড়াই খাবার সংগ্রহ করতে পারেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি, পিক আপ সেবার জনপ্রিয়তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
এমএএস/এআরএ/এমকেএইচ