দেশজুড়ে

লাশ বহনের ফেরিতে হুড়োহুড়ি করে উঠছে মানুষ

লকডাউন চলমান থাকলেও খোলা দোকানপাট ও শপিংমল। তাইত প্রতিদিনই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে রাজধানীতে ফিরছেন শত শত মানুষ। তবে লঞ্চ বন্ধ থাকায় এবং সীমিত আকারে ফেরি চলায় তাদের ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মস্থলমুখী মানুষকে পথে পথে শিকার হতে হচ্ছে ভোগান্তির। বিভিন্ন ছোট যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে চলতে গিয়ে সময় এবং খরচ দুটোই বাড়ছে তাদের।

মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) সকাল ১০টার পর থেকে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতেই ছিল যাত্রীর চাপ।

একইভাবে পাটুরিয়া ঘাট থেকে দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ফেরিগুলোতেও যাত্রী এবং যানবাহনের চাপ ছিল। তবে দৌলতদিয়া থেকে রাজধানীমুখী যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি ফেরিতেই গাদাগাদি করে যাত্রী পারপার হচ্ছে। বালাই নেই সামাজিক দূরত্ব অথবা স্বাস্থ্যবিধির।

এদিকে পাটুরিয়া ঘাটে বেশিরভাগ ফেরিকেই দেখা গেছে রোগী অথবা লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় বসে থাকতে। অ্যাম্বুলেন্স না আসা পর্যন্ত ফেরি না ছাড়ার কারণে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। জরুরি পণ্যবাহী ট্রাকের পাশাপাশি ঘাটে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপও অনেক। অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি এসব যানবাহনও ফেরিতে পারাপার হচ্ছে।

তবে ফেরিঘাট পার হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে নতুন ভোগান্তিতে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যাতায়াতে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, সিএনজিসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহনই ভরসা। এই সুযোগে এসব যানবাহন যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে।

দৌলতদিয়া থেকে ফেরি পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে এসেছেন আরমান আলী। তিনি জানান, তার বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। বাড়ি থেকে রিকশা, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে করে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছেছেন তিনি। এরপর দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফেরি পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছেছেন। গাবতলী যাওয়ার জন্য তার কাছে মোটরসাইকেলের ভাড়া দাবি করা হচ্ছে ৮০০ টাকা।

সভারের নবীনগর যাচ্ছেন লোকমান হোসেন। এক প্রাইভেটকারে চড়ে বসেছেন ৬ জন। বললেন, উপায় নেই ভাই। যেতে হবে। আশুলিয়ায় দোকান। মালিক প্রতিদিন ফোন করছে। না গেলে চাকরি থাকবে না। নবীনগর ভাড়া দিতে হচ্ছে ৪০০ টাকা।

অনেকটা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানালেন আনোয়ার হোসেন। তার কাঁধে একটা ব্যাগ আর মাথায় বস্তা। বললেন- সরকার গণপরিবহন বন্ধ রেখেছে অথচ দোকানপাট খুলে দিয়েছে। মানুষজন যাবে কিভাবে? এটা কোনো লকডাউন হলো? এটা গরীব মারার লকডাউন।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ডিজিএম মো. জিল্লুর রহমান জানান, দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেয়ার ঘোষণার পর থেকেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। আমরা নিষেধ করেও যাত্রী ফেরাতে পারি না। অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন পারাপারের জন্য যখন কোনো ফেরি লোড দেয়া হয় তখনই যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অনেকেই মুভমেন্ট পাস নিয়েও যাতায়াত করছেন।

তিনি জানান, বর্তমানে এ রুটে ৬টি ইউটিলিটি (মাঝারি সাইজ) ফেরি চলাচল করছে।

বি.এম খোরশেদ/এফএ/এএসএম