ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও টঙ্গী এলাকায় বাসা ও অফিসের জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে ঢুকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করত একটি চোরচক্র। চক্রের সদস্যরা দিনের বেলায় বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে টার্গেট ঠিক করে রাতে ইয়াবা সেবন করেচুরি করত।
চুরি করা ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করত তারা। বিজ্ঞাপন দেয়ার কাজে ভুয়া নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করা হতো। প্রযুক্তির মাধ্যমে চোরচক্রের মূলহোতাসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- চক্রের প্রধান আব্দুল গাফফার (৩৯), নজরুল ইসলাম ওরফে সোহাগ (৩০), রিপন (২৮) মাসুদ তালুকদার (৩২) ও মাসুদ (৩০)।
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক জাগো নিউজকে এসব কথা জানান।
তিনি জানান, বুধবার (২৮ এপ্রিল) দিবাগত রাতে রাজধানীর ডেমরা ও কদমতলী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। চক্রের সবাই ইয়াবা ট্যাবলেট সেবনে আসক্ত। রাত জেগে থাকা ও নির্ভয়ে এ রকম চুরি করার জন্য ইয়াবা তাদের খুব প্রয়োজন বলে জানায় চোর চক্রের সদস্যরা। তারা কোথা থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করতো সে ব্যাপারেও তদন্ত করা হচ্ছে।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক বলেন, চক্রের সদস্যরা দিনের বেলা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে টার্গেট ঠিক করে। তাদের মধ্যে রিপন পিকআপ নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করত। আব্দুল গাফফার ও মাসুদ বাইরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করত। আর গ্রিল ভেঙ্গে বাসা বা অফিসের ভেতরে প্রবেশ করতো নজরুল ওরফে সোহাগ। চুরি করা মালামালসহ পিকআপ করে গাফফারের বাসায় গিয়ে ভাগাভাগি করা হতো। মাসুদ তালুকদার ল্যাপটপ ও মোবাইল ডিভাইস অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সেসব পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করত। বিজ্ঞাপন দেয়ার কাজে সে ভুয়া নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করতো, যাতে করে তাকে কোনোভাবে শনাক্ত করা না যায়।’
তিনি আরও জানান, ‘চুরি করা স্বর্ণালঙ্কার তাঁতিবাজার এবং বেশকিছু ল্যাপটপ রাজধানীর অভিজাত একটি মার্কেটের কোনো এক দোকানে বিক্রি করত। বিশেষ করে ঈদ ও বিভিন্ন ছুটিতে যখন বাসা খালি করে লোকজন গ্রামে চলে যায় তখন এই চক্র বেশি সক্রিয় হয়ে যায়। চক্রটি এ পর্যন্ত অসংখ্য বাসা ও অফিসে চুরি করেছে।’
সূত্র মতে, চোরেরা গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের প্রপার্টি কানেক্টের অফিসে কৌশলে প্রবেশ করে একটি আইপ্যাড, একটি আইফোন, ১২ থেকে ১৪টি মোবাইল ফোন, দু’টি ল্যাপটপ ও নগদ ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মো. ওয়ালিউল আজিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়।
এ মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। মামলার ছায়া তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গ্রিলকাটা চোর চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের দেয়া তথ্যমতে চুরি করা ৮টি মোবাইল সেট, ৭টি ল্যাপটপ ও ভুয়া নিবন্ধিত ১৮টি মোবাইল সিম উদ্ধার করা হয়।
চক্রের সঙ্গে যুক্ত অন্য কেউ জড়িত আছে কি-না এবং অন্যান্য ঘটনায় চুরি করা আরও মালামাল উদ্ধারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
টিটি/এএএইচ/এএসএম