গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নারী উদ্যোক্তা নুসরাত জাহান তানিয়ার ‘জাহান’স রান্নাঘর টুঙ্গিপাড়া’। প্রথমে শুধুমাত্র কেক দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তার কাছে পাওয়া যাচ্ছে কেক, জার কেক, পাউন্ড কেক, ফালুদা, পুডিং, বার্গার, চিকেন রোল, শর্মা, চাইনিজসহ নানা ধরনের খাবার। অর্ডার অনুযায়ী ঘরোয়া পরিবেশেই তৈরি করা হয় এসব খাবার। অনলাইনভিত্তিক বলে এতে সাড়াও মিলছে প্রচুর।
টুঙ্গিপাড়ায় ভালো মানের রেস্টুরেন্ট না থাকায় খাদ্য প্রেমীদের গোপালগঞ্জ অথবা খুলনায় যেতে হতো। কিন্তু জাহান'স রান্নাঘরের বদৌলতে ঘরে বসেই স্বাদ নেয়া যাচ্ছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন খাবারের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, মেসেঞ্জার কিংবা মোবাইল ফোনে কল করলেই গ্রাহকরা পাচ্ছেন পছন্দের খাবার।
টুঙ্গিপাড়ার শেখ জান্নাত ফাহমিদা তাসনিম বলেন, ‘সত্যি বলতে, টুঙ্গিপাড়ায় কোনো ভালো মানের রেস্টুরেন্ট না থাকায় কিছু খেতে ইচ্ছা করলে গোপালগঞ্জে যেতে হতো। ফলে মাঝে মাঝে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রেস্টুরেন্টের খাবার খাওয়ার সুযোগ হতো না। কিন্তু, জাহান’স রান্নাঘর আমার এই সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে, এখন আমার যখন ইচ্ছা আমি আপুর থেকে খাবার অর্ডার করতে পারি। আর খাবারের গুনগত মানও যথেষ্ট প্রশংসনীয়।’
পাটগাতীর ফুয়াদ মাহবুব বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার করে জাহান’স রান্নাঘর যেই কাজ শুরু করেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আশা করি তিনি একদিন এটা বড় পরিসরে শুরু করবেন, সেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।’
খাবার রিভিউয়ের জনপ্রিয় গ্রুপ ‘খাবো দাবো কলকলাবো’-এর প্রতিষ্ঠাতা সার্জিল আবতাহী বলেন, ‘নারীদের ঘরে চুপচাপ বসে থাকা মানে অনেক সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাওয়া। ঘরে বসেই যে একজন নারী উদ্যোক্তা হতে পারে জাহান’স রান্নাঘর তারই প্রমাণ। আশা করি, টুঙ্গিপাড়ার মানুষ তার কাছ থেকে সামনে এরকম ভাল মানের খাবার পাবে।’
নুসরাত জাহান তানিয়া বলেন, ‘রান্না-বান্নার প্রতি শখ থেকেই জাহান’স রান্নাঘরের শুরু। কোন পণ্য গ্রাহক পর্যায়ে দেয়ার আগে স্বাদ গুনগত মান পরীক্ষা করি আমি। ফ্রেশ, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে খাবার তৈরিসহ সব কিছুই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিশ্চিত করা হয়। আমি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করে কৃতজ্ঞতা জানাই আমার স্বামীকে। যার সহযোগিতা না থাকলে এসব হতো না। বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাই জাহান’স রান্নাঘরের সব সম্মানিত খাদ্য প্রেমী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের।’
তানিয়ার বিশ্বাস, বাসায় তৈরি খাবারের চাহিদা দিন দিন আরও বাড়তে থাকবে, যদি উদ্যোক্তারা তাদের সেবার মান ধরে রাখতে পারেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম হেদায়েতুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের টুঙ্গিপাড়ার একজন নারী উদ্যোক্তা ভার্চুয়ালি এ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় এসেছেন তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। ২০৪১ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভিশন দিয়েছেন সেটি বাস্তবায়ন করতে গেলে অবশ্যই আমাদেরকে কর্মমুখী হতে হবে এবং কর্মসংস্থানের দিকে যেতে হবে। জাতীয় জনসংখ্যার যেহেতু অর্ধেক নারী তাই নারীদেরকেও মূল অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে এক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তা তৈরি করার বিকল্প কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেলা প্রশাসন গোপালগঞ্জের ভার্চুয়াল কিচেন নামে একটি উদ্ভাবনী অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে যেখানে নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। জেলা প্রশাসক বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের উৎসাহ দিচ্ছেন। আমাদের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় যদি কেউ এরকম উদ্যোগ গ্রহণ করে আমরা তাকে সহযোগিতা করব।’
এসজে/জেআইএম