‘বাড়িতে কেউ আছেন? ভয় নাই দরজা খুলুন, আমি আপনাদের লোক পৌর মেয়র জলিদি। আপনাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।’
এভাবে রাতে খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাজির হচ্ছেন নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়েছে সব এলাকা। মানুষের কাজ নেই, খাবার নেই। অসহায় মানুষ না খেয়ে দিন পার করছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাতের আঁধারে নাটোর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছেন পৌর মেয়র।
করোনা দুর্যোগের এমন পরিস্থিতি মেয়রকে ভিন্নরূপে দেখছেন নাটোরবাসী। দিন নেই, রাত নেই খাদ্য সহায়তা নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। ছুটে চলছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। সরকারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্যসহায়তার কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, রাত গভীর হলেই এখন বিপুল সংখ্যক মানুষ পথে পথে অপেক্ষা করেন মেয়রের জন্য। ফলে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেও অপেক্ষমাণ এসব মানুষের কাছে ছুটে যাচ্ছেন তিনি। অসহায় মানুষগুলোর হাতে তুলে দিচ্ছেন চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, লবণ, তেল, সেমাই, চিনি, দুধ, সাবানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর থলে।
রোববার রাতে খাদ্যসহায়তার খবর পেয়ে শহরের মলিকহাটি নুনীয়া পাড়ায় যান এই প্রতিনিধি। সেখানে গেলে কথা হয় শ্যামলী কর্মকারের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইটের খোয়া ভেঙে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করি। লকডাউনে যতবারই কর্মহীন হয়েছি ততবারই আমাদের পৌর মেয়র ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।’
প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পেয়ে নাটোর পৌরসভার হরিশপুরের জবেদা বেগম, চকরামপুরের জরিনা বেওয়া, বলারীপাড়ার রিকশাচালক আক্কাস মিয়া, কানাইখালী কুলি শ্রমিক হাসান আলী, মীরপাড়ার হাসু বেগম, বঙ্গজলের হাফিজুরসহ হতদরিদ্র মানুষের চোখে-মুখে খুশির আভাস লক্ষ্য করা গেছে।
শহরের চৌধুরী বড়গাছা মহল্লার আসমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী একজন রিকশাচালক। লকডাউনে কর্মহীন হয়ে খেয়ে না খেয়ে ছিলাম। পৌর মেয়র জলি দিদি আমাদের বাসায় গিয়ে খাদ্য পৌঁছে দিয়েছেন।’
নাটোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান চুন্নু জানান, পৌর মেয়র করোনার ১৬ মাস ৯ ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। করোনার শুরু থেকে নাটোরে ফ্রন্ট লাইনে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। এছাড়া শহরবাসীকে সচেতন রাখতে নিয়মিত মাইকিং, বাইসাইকেলযোগে বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করছেন তিনি। দিয়েছেন মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, জীবাণুনাশক স্প্রে।
মেয়র উমা চৌধুরী বলেন, ‘দেশমাতৃকার জন্য কাজ করার শপথ নিয়েই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি। কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হলে হবো, সে নিয়ে চিন্তা করি না। তারপরও যতটুকু সম্ভব সতর্ক থাকার চেষ্টা করছি। নিজে আক্রান্ত হওয়ার ভয় করে তো অসহায় মানুষকে সাহায্য করা থেকে এড়িয়ে যেতে পারি না। তাই সাধ্যমতো এ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাব।’
রেজাউল করিম রেজা/জেডএইচ/জিকেএস