মৃতদেহ নিয়ে হৈ-হুল্লোড় করার রীতি আছে অনেক সংষ্কৃতিতেই। তবে ইন্দোনেশিয়ার তোরাজান প্রজাতির মানুষেরা মৃতদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে যা করেন; তা যেমন উদ্ভট আবার আকর্ষণীয়ও বটে! এজন্যই এ উৎসব দেখতে ভিড় জমায় বিশ্ববাসীরা।
যুগ যুগ ধরে তারা এই রীতি মেনে যাচ্ছেন। প্রতিবছর সেখানে মৃতদেহ নিয়ে উৎসব হয়ে থাকে। পুরোনো মৃতদেহকে কফিন থেকে বের করে নতুন পোশাক পরানো হয়। তখন তারা মৃতদেহকে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ সুলাওয়েসি প্রদেশের তোরাজান প্রজাতির ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান এটি। আপনি হয়তো সেখানে থাকলে চমকে উঠবেন। আপনি সেখানে ১০০ বছরের পুরনো মৃতদেহও দেখতে পাবেন!
বছরের পর বছর আত্মীয়দের মৃতদেহ ঘিরে এভাবেই জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে সেখানে। এই অনুষ্ঠানের নাম মানেনে। চলে এক সপ্তাহ ধরে। কখনও কখনও ১২ দিন পর্যন্তও টেনে নেওয়া হয়।
ওই এলাকার বাসিন্দারা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। তোরাজান প্রজাতির প্রকৃত নাম রিয়াজা। ১৯০৯ সালে ওলন্দাজ শাসকরা এদের নামকরণ করেন তোরাজেন। তাদের প্রভাবেই এই আদিবাসীর একটা বড় অংশ খ্রিস্টান ধর্ম অবলম্বন করে।
তোরাজেন প্রজাতির সবচেয়ে বড় উৎসব হলো মৃতদেহের অন্তেষ্ট্যিক্রিয়া। এটি তাদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। তাদের বিশ্বাস, মৃত পরিজনেরা তাদের বংশকে যেকোনো বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে। বংশে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আছে।
তারোজেনদের কবরখানাও বেশ ভিন্ন। খাড়া পাহাড়ের গায়ে খাঁজ কেঁটে কফিনে মৃতদেহের মমি রেখে দেওয়া হয়। প্রতিবছর পাহাড় থেকে কফিন নামিয়ে মৃতদেহকে নতুন পোশাক পরানো হয়। নতুন কফিনের বন্দোবস্তও থাকে।
কফিনগুলোও বেশ ভিন্ন। দেখলে মনে হবে যেন ঘর সাজানোর সুন্দর শো পিস। কফিনের ভেতর দেওয়া হয় বিভিন্ন জিনিস, যা প্রতিবছর পরিবর্তিত হয়। নতুন পোশাক, অর্থ, গয়না, পরচুলা, বিভিন্ন ধরনে প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হয়।
মৃতদেহ বা মমিটিকে কবর থেকে বের করে এনে প্রথমে পরিষ্কার করা হয়। নির্দিষ্ট ওষুধপত্র দেওয়া হয় নিয়ম করে। পরানো হয় নতুন পোশাক। পরচুলা লাগিয়ে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তির মৃতদেহ নিয়ে এত হইচই তাঁর একটি ছবি মালা দিয়ে কফিনের সামনে রাখা হয়।
যে যত ধনী; তার জাঁকজমকতওি তত বেশি। এক সপ্তাহ ধরে চলে এই জাঁকজমকতা। খাওয়া-দাওয়া, গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠে এলাকাবাসী। তবে মৃতদেহকে ঘিরে নিয়ম করে কান্নাকাটি করতে হয় নারীদের। এটাই তাদের রীতি। অনুষ্ঠান শেষে মৃতদেহকে সাজিয়ে গুছিয়ে আবার কবরে রেখে দেওয়া হয়। এক বছরের জন্য তাদের ছুটি।
এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উৎসব দেখতেই প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক তোরাজানদের গ্রামে ভিড় জমান। মেনেনে উৎসবের সময় বলিও দেওয়া হয়। এক ডজন মহিষ কিংবা ১০০টি শূকর বলি দেওয়া হয়ে থাকে। যদিও এই নিয়মটি প্রচণ্ড খরচ সাপেক্ষ হওয়ায় বিত্তশালীরা ছাড়া কেউ বিশেষ করতে পারেন না।
জেএমএস/এএসএম