দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১২ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হচ্ছে দেশের সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেক্ষেত্রে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ১৮৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও খুলে দেওয়া হবে। বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার খবরে আনন্দে ভাসছে শিক্ষার্থীরা। তবে উপজেলার কিছু কিছু বিদ্যালয় ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় এ সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে এক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে। যেকোনো মুহূর্তে জরাজীর্ণ এসব ভবনের ছাদ ধসে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এ উপজেলার ১৮৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৬টি বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে বলে উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে। এ সকল বিদ্যালয়ে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণে বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার সাথে সাথে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান করাবেন।
খসে পড়ছে বিদ্যালয়ের পলেস্তারা
উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে যে সকল বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে সেগুলো হলো, ৬৪নং পোলসাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮১ কয়খা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২নং মদনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯৬নং কুশলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩২নং পশ্চিমকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮নং জহরেরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৬২নং বঙ্গবন্ধু মাছপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৫নং হরিনাহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৭৯নং সোনাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২নং ভুতেরবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৮নং বড় দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২০নং কাফুলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯৮নং টিহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯৩নং বহলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২২নং শৌলদহ মুশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৬নং হাসুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪০নং ধারাবাশাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭৩নং কলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩নং হাজরাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৫১নং বদরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১১৫নং দক্ষিণ চৌরখুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৫২নং পাইকেরবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৪২নং পশ্চিম নৈয়ারবাড়ি মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫০নং শান্তি কুটির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬৯নং শিমুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৯নং রামশীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩৪নং পশ্চিম নৈয়ারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮০নং কুরপালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৩নং খাগবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫৯নং ছোট দিঘলীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮২নং রুথিয়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩০নং পূর্ব বর্ষাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৮নং বান্ধাবাড়ি হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮৭নং বাহির শিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০১নং নারায়ণ খানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২৯নং মধ্যবাগান উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০৮নং মধ্য হিরণ মুন্সিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫৮নং জটিয়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫১নং দক্ষিণ গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৫নং পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৭নং বান্ধাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮৬নং তারাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৯নং পূর্ব হরিনাহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭১নং তেঁতুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯৪নং সোনাইলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬৫নং মধ্য মাঝবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮০নং পিড়ারবাড়ি মুশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৯নং হিজলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৪নং মাচারতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩নং পূর্ব বাগানউত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭নং দিঘলীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪১নং গচাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫৫নং নারিকেল বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৪৯নং কালিগঞ্জ বুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭৪নং বুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৪৩নং দেশি কদমবাড়ি জগদীশ চন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
৪০নং ধারাবাশাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিখিল চন্দ্র বাড়ৈ বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ৩৭৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানোর জন্য একটি টিন সেট ভবন ও দু’কক্ষ বিশিষ্ট একতলা একটি পাকা ভবন রয়েছে। এই পাকা ভবনের একটি রুমে রয়েছে আমাদের অফিস কক্ষ। অপর কক্ষে আমরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাই। এ ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনটির পলেস্তারা খসে পড়ছে। টিনশেট ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে প্রায় ১৫ বছর আগে। এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই আমরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাই।
টিনশেট ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক অনিপ হালদার বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমরা উপজেলা শিক্ষা অফিসে চিঠি দিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণে আমরা এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য নীলকণ্ঠ বাড়ৈ বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের দুটি ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। পাকা ভবনটির শ্রেণি ও অফিস কক্ষের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টি খুললে ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এই বিদ্যালয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাফায়েত হোসেন বলেন, আশপাশের উপজেলাগুলোর চেয়ে আমাদের এ উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষার মান অনেক উন্নত। বর্তমান সরকার এ উপজেলায় পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন নেই। অনেক বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। অপরদিকে অনেক বিদ্যালয়ে পিডিবি-২ এর আওতায় দু’কক্ষ বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ সকল বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি থাকার কারণে শিক্ষকদের পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। তাই আমি দ্রুত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ভবন সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার অরুণ কুমার ঢালী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর তালিকা গত বছরের জানুয়ারি মাসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। এ সকল ভবন পাস হয়েছে কি না এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত চিঠি পাইনি। তবে আশা করছি শিগগিরই ভবনগুলো পাস হবে।
এসএইচএস/এএসএম