‘কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি’—কেউ কথা রাখেনি শিরোনামে কবিতাটি লিখেছিলেন বাংলা সাহিত্যের নন্দিত লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কবির কাছে কেউ কথা রাখেনি মনে হলেও ভালোবেসে হাতে হাত রেখে টানা ৩৩ বছর একে অপরের কথা রেখেছেন প্রতিবন্ধী দম্পতি সিরাজুল (৬৫) ও নুরজাহান (৫৫)। রোগ-শোক, অভাব-অনটন—কোনোকিছুই এক মূহুর্তের জন্য আলাদা করতে পারেনি তাদের।
দীর্ঘদিন ধরে ভালোবাসার এমনই এক নজির স্থাপন করে যাচ্ছেন জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সহায়-সম্বলহীন প্রতিবন্ধী এ দম্পতি। তাদের নিজেদের কোনো সম্পদ নেই। নিজের ঘরও নেই। অন্যের সাহায্য-সহযোগিতায় বেঁচে আছেন তারা। কিন্তু এতো অভাব-অনটনের পরও উভয়ের মাঝে ভালোবাসার কমতি নেই। একসঙ্গে অতিবাহিত করেছেন তিন দশকেরও বেশি সময়।
সিরাজুল-নূরজাহান দম্পতি উভয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। স্ত্রী চোখে কিছুটা দেখলেও স্বামী দেখতে পান না কিছুই। পৌরসভার বীর-ধানাটা গ্রামের খাদ্য গোডাউনের পূর্ব পাশের রেললাইন সংলগ্ন ৬০০ টাকা ভাড়ায় টিনশেডের ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছেন এ দম্পতি।
স্থানীয় রুবেল মিয়া, জাকিরসহ বেশ কয়েকজন বলেন, উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের পুঠিয়ারপাড় গ্রামের ময়না শেখের (পূর্ব নাম ময়না সাহা) ছেলে সিরাজুল। তিনি একসময় সনাতন ধর্মাবলম্বী ছিলেন। তখন তার নাম ছিল স্বদেশ। ১৯৮৮ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে একই গ্রামের মজিবুর রহমানের মেয়ে প্রতিবন্ধী নুরজাহানকে বিয়ে করেন। তখন থেকে তারা এখনও একসঙ্গে। তাদের এ ভালোবাসা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
সিরাজুল-নুরজাহান দম্পতি বলেন, আমাদের নিজের বলতে কিছুই নেই। তবুও দুজন দুজনের প্রতি রয়েছে ভালোবাসা। আমরা ভূমিহীন। আমরা কোনো বয়স্ক ভাতা কিংবা প্রতিবন্ধী ভাতা পাই না। সারাদিন মানুষজন যা সাহায্য-সহযোগিতা করে তা দিয়েই আমার সংসার চলে। থাকার জায়গা থাকলে আরও একটু ভালোভাবে থাকতে পারতাম।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে তারা প্রকৃতই প্রতিবন্ধী হলে তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।
এসআর/জেআইএম