বিনোদন

দেশে তো হিরোই নাই, ভিলেন সংকটের আলাপ তো পরে: শিবা শানু

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা শিবা শানু। প্রায় ২৫ বছর ধরে অভিনয় করছেন। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি ভিলেন হিসেবে দর্শকের কাছে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। এখনো নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন।

শাপলা মিডিয়া প্রযোজিত পূজন মজুমদারের ‘প্রিয়া রে’ সিনেমায় কাজ করছেন তিনি। এখানে শিবাকে দেখা যাবে রজতাভ দত্তের ভাই ও কৌশানী মুখার্জীর চাচা চরিত্রে। তার এই চরিত্রে রয়েছে অনেক টুইস্ট।

শিবার ভাষায়, ‘প্রথমে দর্শক বুঝতে পারবে না চরিত্রটি ভিলেন নাকি ভালো। শেষের দিকে গিয়ে জানা যাবে সে কতোটা ভয়ংকর। বেশ উপভোগ্য একটি চরিত্র।’

গতকাল ১ অক্টোবর চাঁদপুরের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামে শুটিং করছিলেন শিবা শানু। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজের চরিত্রটি নিয়ে কথা বলেন তিনি। একপর্যায়ে দেশে ভিলেন সংকট নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি সিনেমার জন্য ভিলেন না থাকলেও চলে। কিন্তু হিরো না থাকলে চলে না। আমাদের দেশে তো হিরোই নেই। ভিলেন সংকট তো পরের বিষয়।’

অনেক হিরো তো কাজ করছেন। তবে হিরো নেই বলতে কি বোঝাতে চেয়েছেন, জানতে চাইলে শিবা শানু বলেন, ‘হিরো মানে নামে তো অনেকেই আছে। কিন্তু দর্শক চাহিদা বাজার কাটতি হিরো তো নেই। এখনকার সময়ে সাইমন, শুভরা ভালো করছে। এই যে নতুন ছেলে শান্ত খানের সঙ্গে কাজ করছি। ওর সম্ভাবনা আছে। কিন্তু তাদের প্রতি ইন্ডাস্ট্রি কতোটা যত্নশীল সেটা সবাই জানে।

আর যদি ভিলেন সংকটের কথা বলেন তবে দেখুন, ইন্ডাস্ট্রির সিস্টেমই ভিলেন সংকট তৈরি করেছে। ওয়ান ম্যান শো করতে গিয়ে গত কয়েক বছরে ভিলেন চরিত্রের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে আর বের হতে পারছে না। এখন ভিলেন মানেই মিনিটে মিনিটে নায়কের কাছে মার খাওয়া চরিত্র। নেই বুদ্ধি ও সংলাপের কোনো মুন্সিয়ানা। নেই কোনো গুরুত্ব। এজন্য কেউ এখন ভিলেন হতে চায় না।

অথচ আমরা তো রাজীব, এটিএম শামসুজ্জামান, হুমায়ূন ফরীদি, খলিল সাহেবদের দেখে তৈরি হয়েছিলাম। আমাদের দেখে তো কেউ তৈরি হবে না। কোনো আকর্ষণ নেই তো। একটা ভিলেন যখন গল্পের শুরুতেই ছোট হয়ে যায় তখন সেই ভিলেনকে দিয়ে আর কি দেখাবেন আপনি। এ গল্পটা টানতে পারবে না। আলটিমেটলি ভিলেনের ক্যারেক্টারই ধ্বংস করা হচ্ছে।

আমি তো বলবো শুধু ভিলেন কেন, একটা প্রবীর মিত্রের মতো বাবা নেই। শওকত আকবরের মতো বাবা নেই। মিনু রহমানের মতো মা নেই, আনোয়ারার মতো মা নেই। রোজি আপার (রোজি আফসারী) মতো একটা বোনের ক্যারেক্টার করবে নেই। এগুলাও তো বিরাট সংকট। এগুলা না থাকার কারণে সিনেমায় বাবা-মা দেখানো হয় না। নায়ক-নায়িকা আছে তাদের কেউ নেই। তাদের কোনো ঠিকানা নেই। পথে দেখা, পথে প্রেম সিনেমা হয়ে গেলো।

ওই নায়ককেন্দ্রিক, নায়ক-নায়িকা নিয়ে গল্প সাজাতে গিয়ে এসব চরিত্রে অভিনয় সংকট দেখা দিয়েছে।’

ভিলেনের সংকট চরমে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় বাতলে দিয়ে শিবা শানু বলেন, ‘সিস্টেম ভাঙতে হবে। ওয়ান ম্যান শো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি চরিত্রের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। সিনেমা তৈরি করতে হবে এমনভাবে যেখান থেকে ভিলেনকে নিয়ে মাতামাতি হবে, ভিলেন চরিত্রের উত্থান হবে। যেমন- একটা ‘দোস্ত দুশমন’ একজন ভিলেন জসীমকে দিয়েছে। ‘দাঙ্গা’ আপনাকে একজন ভিলেন দিয়েছে, রাজীব ভাই। ‘তেজি’ সিনেমা একজন ডিপজলকে দিয়েছে। মোটকথা হলো আপনি যে বিষয়ে মনোযোগ দেবেন সে বিষয়টি ভালো হবে।’

শিল্পী সমিতির নির্বাচনে আপনার নাম শোনা যাচ্ছে। আপনি কি সত্যিই প্রস্তুতি নিচ্ছেন? শিবা শানুর উত্তর, ‘না। আমার কোনো প্ল্যানিং নেই। ১০-১২ বছর তো আমি কমিটিতে ছিলাম। তখন কাজ ছিল, শিল্পীদের আসা যাওয়া ছিল। এখন আমি নেতা হয়ে কি করবো? আমার তো কিছুই করার নেই। বছর বছর শুধু অনুদান দেবো?

এসব বাদ দিয়ে আমাদের উচিত সেইটা ভাবা যে সিনেমা শিল্পটাকে কীভাবে বাঁচানো যায়। প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পী-কলাকুশলী সবাই মিলে চেষ্টা করা উচিত।’

এলএ/এএসএম