নড়াইল মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে দুই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এ সময় ভিডিও ধারণ করতে গেলে এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকাল ৯টা থেকে নড়াইল মুক্তি দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচির শেষ দিকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডভোকেট এসএ মতিন খিচুড়ির প্যাকেট আনতে যান। তখন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিসি অফিসের সহকারী নাজির বাবর আলীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বাবর ও কয়েকজন কর্মচারী এসএ মতিনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।
এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু এগিয়ে গেলে তার ওপরও চড়াও হন। উত্তেজিতভাবে দুই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে অশালীন আচরণ করতে থাকেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এসএ টিভির নড়াইল প্রতিনিধি আবদুস সাত্তার ভিডিও ধারণকালে ওই অফিসের কর্মচারীরা মোবাইলটি জোরপূর্বক কেড়ে নিয়ে যায় এবং ভিডিও ডিলিট করেদেন।
ঘটনার সময় নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ফকরুল হাসান, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৃষ্ণা রায়সহ বেশ কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এসএ মতিন বলেন, ১৯৭১ সালের এ দিনে আমরা জীবন বাজি রেখে নড়াইলকে মুক্ত করেছিলাম। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে ডিসি অফিসের কর্মচারীদের হাতে লাঞ্ছিত হলাম। এর থেকে দুঃখজনক আর কিছু থাকতে পারে না।
সাংবাদিক আবদুস সাত্তার বলেন, সহকারী নাজির বাবর আলীসহ বেশ কয়েকজন কর্মচারী বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএ মতিন ও সাইফুর রহমান হিলুর ওপর তেড়ে যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ফকরুল হাসান ঠেকানোর চেষ্টা করলেও নাজির আলী তোয়াক্কা না করে একাধিকবার হাত এগিয়ে নিয়ে যান এবং কেউ কেউ চেয়ার উঁচু করে মারতে যান। তখন পেশাগত কারণে আমি ভিডিও ধারণ করতে যাই। নড়াইলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৃষ্ণা রায় ভিডিও করতে বাধা দেন। কিন্তু পেশাগত কারণে আমি ভিডিও ধারণ করতে থাকি। এক পর্যায়ে ডিসি অফিসের কয়েকজন কর্মচারী আমাকে জাপটে ধরে জোরপূর্বক হাত থেকে মোবাইলটি ছিনিয়ে নেন। খবর পেয়ে আমার সহকর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর মোবাইল ফেরত দেয়।
এদিকে ঘটনার পর মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারর্স ফোরাম নড়াইল জেলা শাখার উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মানববন্ধন চলাকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এসএ মতিন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু ঘটনার বর্ণনা করে বক্তব্য দেন।
নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল হক টুকু বলেন, নড়াইল মুক্ত দিবসে দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ সময় ভিডিও ধারণকালে আমাদের একজন সহকর্মীকে লাঞ্ছিত করে ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে আমরা সন্ধ্যায় জরুরিভাবে মিটিং করবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হাবিবুর রহমান বলেন, আমি বাইরে ছিলাম। নড়াইলে এসেছি। আলোচনার মাধ্যমে সন্তোষজনক সমাধানের জন্য সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে বসবো।
হাফিজুল নিলু/এসজে/এএসএম