দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহির ইয়াসিন। বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সংগ্রহ করে রাখা তার নেশা। এখন তার সংগ্রহে রয়েছে ১২০টি দেশের মুদ্রা।
মাহির চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌর এলাকার জালিবাগান গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে। সে রহনপুর এবি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ছে।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাহির যখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তখন তার বাবা নতুন একটি বাড়িতে ওঠেন। বাড়ির আসবাবপত্র পরিবর্তন করার সময় পুরোনো একটি সিন্দুক দেখতে পান তারা। মাহির সিন্দুকটি খুলতে পরিবারকে চাপ দেয়। এর ভেতরে কী আছে সে জানতে চায়। কিন্তু সিন্দুকটির চাবি পরিবারের সদস্যরা কেউ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে তার বাবা সিন্দুকটির তালা ভেঙে ফেলেন। দেখা যায় সিন্দুকের ভেতর ২৪টি ব্রিটিশ আমলের বিভিন্ন শাসকের রৌপ্য মুদ্রা এবং ৮০-৯০টি তাম্র মুদ্রা।
মুদ্রাগুলো ওই বাড়ির সদস্যদের পূর্বপুরুষদের ছিল। সেগুলো সংগ্রহ করে সিন্দুকের ভেতরে রাখা ছিল। ওই মুদ্রাগুলো দেখার পর থেকেই মুদ্রা সংগ্রহের নেশা পেয়ে বেসে মাহিরের।
মুদ্রা ছাড়াও মাহির ইয়াসিনের সংগ্রহে রয়েছে পুরোনো বিভিন্ন জিনিসপত্র
মাহির সিন্দুকের মুদ্রাগুলো নেওয়ার জন্য আবদার করেছিল। তবে তখন সে ছোট থাকায় তার কাছে মুদ্রাগুলো দিতে রাজি হননি বাবা মোবারক। পরে মাহির বাইরে থকে মুদ্রা সংগ্রহ করতে শুরু করে এবং তার বাবাও সিন্দুকের মুদ্রাগুলো দিয়ে দেন তাকে।
তবে মুদ্রা সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে মাহিরকে। অনেক সময় অর্থের বিনিময়ে মুদ্রা সংগ্রহ করতে হয়েছে তাকে। তারপরও এ কাজে আনন্দ পায় বলে জানায় সে।
মাহির জাগো নিউজকে বলে, ‘এগুলো সংগ্রহ করা আমার নেশা। আগের হারিয়ে যাওয়া জিনিজপত্র দেখতে আমার ভালো লাগে। তবে এগুলো সংগ্রহের জন্য আমাকে সবসময় যোগাযোগ রাখতে হয়।’
বিভিন্ন জায়গা জুয়েলার্সে ঘুরে ঘুরেও অনেক সময় মুদ্রা সংগ্রহ করে মাহির। এভাবে ১০ বছরে তার সংগ্রহে রয়েছে ১২০টি দেশের প্রায় দুই হাজার মুদ্রা। এরমধ্যে বিলুপ্ত কিছু দেশের মুদ্রাও আছে।
মাহিরের সহপাঠী কিরণ জানায়, মুদ্রা ও প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস সংরক্ষণে খুবই আগ্রহী মাহির। আমরা বন্ধুরা মিলে তার সংগ্রহের সামগ্রীগুলোর বিষয়ে খোঁজখবর রাখি। আমরা তাকে উৎসাহ দিই।
এ বিষয়ে মাহির ইয়াসিনের বাবা মোবারক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে এসব করতে মানা করলেও ও শোনেনি। তবে আমি এখন তাকে উৎসাহ দিই, সহযোগিতা করি। পড়ালেখার পাশাপাশি তার এ ধরনের শখের বিষয়টি অনুকরণীয়।’
মুদ্রা ছাড়াও মাহির ইয়াসিনের সংগ্রহে রয়েছে পুরোনো বিভিন্ন জিনিসপত্র
গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার দাস জানান, কেউ যদি শখের জন্য মুদ্রা সংগ্রহ করেন তাহলে সেটি বেআইনি নয়। তবে কেউ যদি ব্যবসার জন্য সংগ্রহ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই তিনি আইনের আওতায় পড়বেন।
গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান জানান, মাহিরের মুদ্রা সংগ্রহের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ নেবেন।
মুদ্রা ছাড়াও মাহির ইয়াসিনের সংগ্রহে রয়েছে পুরোনো টেলিভিশন, বিভিন্ন দেশের দিয়াশলাই, পাথরের প্লেট, হ্যাচাক লাইট, হারিকেন, ব্রিটিশ আমলের কলস, পুরোনো ক্যামেরা, ব্রিটিশ আমলের বাটখারা, পাথরের তৈরি অস্ত্র, পোড়ামাটির ফলক, পুরোনো টর্চলাইট, রত্নপাথর, কাসার গ্লাসসহ বিভিন্ন সময়ের জিনিসপত্র।
সোহান মাহমুদ/এমএস