দেশজুড়ে

হারিয়ে গেছে জামালপুরের দ্বিতীয় ডান্ডি

একসময় বলা হতো পাট, সরিষা ও গরুর গাড়ি নিয়ে সরিষাবাড়ি। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষা আবাদের অস্তিত্ব টিকে থাকলেও পাট শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ধীরে ধীরে বন্ধ হয়েছে সকল পাটকল। শ্রমিকদের বহু আন্দোলন সংগ্রামের পর কিছুদিনের জন্য পাটকলগুলো চালু হলেও আবারও তা বন্ধ হয়ে যায়।

একদিকে সোনালি আঁশ, অন্যদিকে রুপালি কাঠি। দুইয়ে মিলে সম্ভাবনাময় শিল্প পাট। প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে শুধুমাত্র পাটের ব্যাগের চাহিদাই রয়েছে প্রায় ৫শ বিলিয়ন। অথচ এমন একটি সম্ভাবনাময় শিল্প ধ্বংসের মূল কারণ হিসেবে এলাকাবাসী স্থানীয় রাজনীতির সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন।

স্থানীয়রা জানান, একসময় সরিষাবাড়ী বাণিজ্যিক রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবে উপমহাদেশের দেশগুলোর কাছে খুবই পরিচিতি ছিলো এবং পাট ব্যবসায়ী কেন্দ্র হিসেবে নারায়ণগঞ্জের পরেই ছিলো এর স্থান। এজন্য সরিষাবাড়ীকে বলা হতো দ্বিতীয় নারায়ণগঞ্জ। প্রাচ্যের দ্বিতীয় ডান্ডিও বলা হতো এই অঞ্চলকে।

ব্রহ্মপুত্র নদীর ধারে সদর থানার ইটাইল নদীবন্দর থেকে পাটবোঝাই করে নৌকা কলকাতা, মাদ্রাজ ও হুগলী যেত এবং উৎপাদিত পাট নেওয়ার জন্য হাজার হাজার নৌকা যমুনা নদীতে ভিড় করতো।

জানা যায়, উপজেলায় একসময় ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ২২টি পাটের কুঠি ছিলো। যেখানে প্রায় বাইশ হাজার শ্রমিক কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন তারা বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা, অনেকে হয়েছেন বেকার।

রেলওয়ে কলোনিতে বসবাসরত জোসনা রায়, হেনা খাতুন, শেফালী রায়, গোবিন্দ রায়, স্বরসতী রায়সহ আরও অনেকে জানান, একসময় এই উপজেলায় খুবই উন্নত জাতের পাটের আবাদ হতো। পাটের আবাদ বেশি হওয়ায় আলহাজ্ব জুট মিলস, পপুলার জুট মিলস, ইস্পাহানী জুট বেলার্স, বিজেএমসি, বিজেসিসহ আরও অনেক সংস্থা পাটের ব্যবসা শুরু করে। এই মিলগুলোতে আমরা প্রায় ২০-২২ বছর কাজ করেছি, তখন খুবই ভালো চলেছি। এখন সন্তান নিয়ে কিভাবে চলি কেউ তা খোঁজ রাখে না। এখন আমরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।

আলো রাণী, হাসি রাণী, সোনালী রাণীদের দাবি, এই অঞ্চলে আবারও সেই হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। খুটখাট শব্দে মুখরিত হয়ে উঠবে এই অঞ্চল।

এ ব্যাপারে আলহাজ্ব জুটমিল শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি মো. সামিউল হক জাগো নিউজকে জানান, এক সময় জুটমিলগুলোতে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো। এখন তাদের মাঝে কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তি করছে। মূলত শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধার অভাব, স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং সরকারের অনীহার কারণে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হওয়ার পথে দ্বিতীয় ডান্ডি খ্যাত সরিষাবাড়ীর পাট-শিল্প।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপমা ফারিসা জানান, এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে জানানো হবে।

নাসিম উদ্দিন/এফএ/জিকেএস