সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তের নদী পাটলাই। প্রতি বছর নদীটির পানি কমে যাওয়ায় দেখা দেয় তীব্র নৌজট। এতে ৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লেগে যায় ১৫ থেকে ৩০ দিনেরও বেশি। এবছরও ব্যতিক্রম হয়নি। পাটলাই নদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র নৌজট। নদীতে আটকে পড়েছে শত শত বাল্কহেড। নৌযানগুলো কবে নাগাদ তীরে ভিড়বে তার নিশ্চয়তা নেই।
মালামাল পরিবহনে তাহিরপুর উপজেলার সঙ্গে সরাসরি কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। বর্ষা ও হেমন্তে কেবল ভরসা নৌপথ। প্রতি বছর উপজেলার সীমান্তবর্তী বড়ছড়া, বাগলী ও চাড়াগাঁও শুল্কস্টেশন থেকে কোটি কোটি টাকার কয়লা ও চুনাপাথর এবং উপজেলার বালু ও নুড়িপাথর কিনে সারাদেশে জোগান দেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলা সদর ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর, ধর্মপাশাসহ পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ভৈরবসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে বিভিন্ন মালামাল আনা-নেওয়া করা হয়।
এসব পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম নদীপথ। কিন্তু নদীর নাব্য সংকটের কারণে ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকেই পাটলাই নদীতে আটকা পড়ে শত শত বাল্কহেড। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র নৌজট।
সম্প্রতি সরেজমিন পাটলাই নদীতে গিয়ে দেখা যায়, পাটলাই নদীপথে নাব্য সংকটের কারণে কয়লা, বালু ও পাথর বহনকারী শতাধিক নৌযান আটকে পড়ে আছে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে। এতে অর্ধলাখ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের জীবনজীবিকা হুমকির মুখে।
নদীতে আটকেপড়া নৌকার মাঝিরা জানান, দীর্ঘদিন আটকে থাকার কারণে নৌকাতেই থাকতে হচ্ছে মালিক-শ্রমিকদের। এ সুযোগে উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের পাটলাই নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে স্থানীয় সংঘবদ্ধ চক্র চাঁদাবাজি শুরু করেছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় সোলাইমানপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন নৌযান নিয়ে আটকেপড়া মালিক ও মাঝিরা।
পণ্যবাহী বাল্কহেড চালক সাব্বির মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘কয়লা ও চুনাপাথর ব্যবসায়ীরা নৌকায় কয়লা তুলে দিয়েই তাদের দায় সেরেছেন। লাভ যা তাদেরই হয়েছে। যারা মাল কিনে নিচ্ছেন এবং আমরা যারা মালামাল গন্তব্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছি কষ্টে আছি। এখানে আটকে থাকার কারণে স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
নৌশ্রমিক সিরাজ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, পাটলাই নদীর নাব্য সংকটে নৌজটের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় সাত শতাধিক নৌকা (বাল্কহেড) ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার কয়লা, চুুুুনাপাথরসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে আটকে আছেন। তিনি বলেন, পুলিশ টহলে থাকলে সাময়িক সময় নৌশ্রমিকরা ভালো থাকেন। পুলিশ চলে গেলে চরম আতঙ্কের মধ্যেই সময় পার করেন তারা।
চুনাপাথর ও কয়লা ব্যবসায়ী রফিক উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নাব্য সংকটের কারণে ৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ১৫ থেকে ৩০ দিন। ক্রেতাদের সময়মতো মালামাল দিতে পারছি না। এতে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।’
প্রতিবছর নৌজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে জানান পণ্যবাহী বাল্কহেড চালক কায়েস মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার যদি নদীটি দ্রুত খনন করে দিতো তাহলে হয়তো আমাদের এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলতো।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী র্কমকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবছর নদীর নাব্য সংকটের কারণে নৌকাগুলো আটকে থাকছে। নৌজট নিরসনে সবসময় খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল লতিফ তরফদার বলেন, আটকেপড়া নৌযানের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে পুলিশ। আমি নিজে গিয়েও সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করছি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শাখা-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাটলাই নদীসহ সুনামগঞ্জের ১৪টি নদী খননের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে নদী খননে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
লিপসন আহমেদ/এসআর/এএসএম