চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে একটি মাদরাসায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে কেকের বদলে পাউরুটি কাটার ঘটনায় করা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে মামলার ১১ আসামির মধ্যে ৯ জন বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন উপজেলার বোয়ালিয়া বৌরতলা দাখিল মাদরাসার সুপার আব্দুস সালাম (৫৫) ও সহকারী শিক্ষক গোলাম কবির (৪৮)।
তবে আদালত তাদের কারাগারে না পাঠিয়ে পাঁচ শর্তে প্রবেশন দিয়েছেন। শর্ত লঙ্ঘন করলে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে তাদের। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরও একমাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
প্রবেশনের শর্তগুলো হলো- প্রবেশনকালীন আসামিরা কোনো প্রকার অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন না বা একই ধরনের অপরাধ করবেন না। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ইতিহাস সম্পর্কে নিজেরা পড়বেন এবং সহকর্মী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জানাবেন। আদালত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন। প্রবেশনকালীন জাতির পিতার নিজ হাতে লেখা তিনটি বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’ পড়বেন। এছাড়া জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ এবং রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা ‘একাত্তরের চিঠি’ বইগুলো পড়বেন।
দুই আসামি প্রবেশনে থাকার সময় ১০টি করে ফলদ ও বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ করবেন বলেও শর্ত দিয়েছেন আদালত।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে বোয়ালিয়া বৌরতলা দাখিল মাদরাসায় কেকের পরিবর্তে পাউরুটি কাটা হয়। অনুষ্ঠানটি ফেসবুকে লাইভ প্রচার করেন শিক্ষক গোলাম কবির। ব্যঙ্গাত্মক এই আয়োজন ফেসবুকে দেখে স্থানীয়রা গোমস্তাপুর থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে মাদরাসার সুপার আব্দুস সালাম ও শিক্ষক গোলাম কবিরকে আটক করে পুলিশ। পরে রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী। আলোচিত এ মামলারই রায় ঘোষণা করলেন আদালত।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা বলেন, অভিযুক্ত দুই আসামির প্রবেশনের শর্ত মানার বিষয়টি তদারকি করবেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা। তিনমাস পর পর তাদের শর্ত প্রতিপালন ও অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রবেশন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আসামিদের প্রবেশনের সময় শর্তপালন সন্তোষজনক হলে তাদের এই দণ্ড চাকরিসহ ভবিষ্যৎ জীবনে কোনোরূপ অযোগ্যতা বলে গণ্য হবে না বলে আদালত উল্লেখ করেছেন।
সোহান মাহমুদ/এসআর/এএসএম