দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় নিজ বাড়িতে মারা যান বাউল ইসলাম উদ্দিন বয়াতি (৬৬)। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামে তার বাড়ি।
স্বজনরা জানান, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে হঠাৎ স্ট্রোক করে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হন তিনি। কিছুদিন ময়মনসিংহ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এর পর থেকে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়িতে চরম অনটনে দিন কাটাচ্ছিলেন। নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের একাধিক নাটক, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনে গান গেয়ে খ্যাতি অর্জন করেন বাউল ইসলাম উদ্দিন।
কয়েকদিন আগেও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন ইসলাম উদ্দিন বয়াতি। চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে স্থানান্তরের পরামর্শ দিলেও অর্থাভাবে তা হয়ে ওঠেনি। এরপর থেকে বাড়িতেই অবস্থান করেন তিনি।
ভিটা ছাড়া আর কোনো সহায় সম্পত্তি নেই এ গুণী মানুষের। অর্থাভাবে একমাত্র মেয়ের পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গেছে। স্বামীর চিকিৎসা, মেয়ের পড়াশোনা আর সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তার স্ত্রী লিয়া খানম।
এলাকাবাসী জানান, তিনি শৈশব থেকেই গানে মগ্ন ছিলেন। ছাত্রজীবনে মামা রঙ্গু মিয়ার কণ্ঠে গান শুনে সংগীতের প্রতি আসক্ত হন। এরপর প্রখ্যাত বাউল আবেদ আলীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে বাউল গান ও বাউল শাস্ত্রের তালিম নেন। কৈশোরেই সংগীতশিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পরে গানকেই বেছে নেন অবলম্বন হিসেবে।
১৯৯২ সালে কেন্দুয়ার কুতুবপুর গ্রামের এক আসরে বাউল গান গেয়ে তিনি নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের নজরে আসেন। পরে তার ঘনিষ্ঠ সহচর হয়ে ওঠেন।
তিনি হুমায়ূন আহমেদের ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’, ‘চন্দ্র কারিগর’, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘এনায়েত আলীর ছাগল’, ‘অদেখা ভুবন’, ‘চৌধুরী খালেকুজ্জামানের বিশ্ব রেকর্ড’, ‘থ্রি-টু-ওয়ান জিরো অ্যাকশন’সহ ১৩টি নাটক, চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, বিজ্ঞাপনচিত্রে গান ও অভিনয় করেন।
অভিনয়ের মধ্যদিয়ে নব্বই দশক ও তার পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে পরিচিতি পান তিনি। একাধিকবার গান করেছেন দেশের বাইরেও।
তাঁর মৃত্যুতে নেত্রকোনা-৩ আসনের এমপি অসীম কুমার উকিল, জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান, জেলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি হায়দার জাহান চৌধুরী, শিকড় শিল্পীগোষ্ঠীর সম্পাদক জিয়াউর রহমান খোকনসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ শোক প্রকাশ করেছেন।
এইচ এম কামাল/এসইউ/জেআইএম