গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়ে। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া নিয়ে তর্ক-বিতর্কের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক পদে তিনজন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে অহনা আরেফিন এ নিয়োগ পান বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে নিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব জানান, আইনে বলা হয়েছে সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থী নেওয়া যাবে। কোথাও বলা নেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া যাবে না। ভালো ক্যাম্পাসে পড়লেই যে শিক্ষার্থী ভালো হবে এমন তো কোনো কথা নেই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যদি ভাইভা বোর্ডে ভালো করতে পারে তাহলে সে তো নিয়োগ পেতেই পারে।
তিনি আরও বলেন, সিলেকশন বোর্ডে রাষ্ট্রপতি ও রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক নিয়োগ করা উচ্চ পর্যায়ের লোকজন আছেন। তারা যেটা ভালো মনে করেছেন সেভাবে সিলেকশন করেছেন।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত অহনা আরেফিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়ে কি না জানতে চাইলে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, তিনি যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সন্তান হতেই পারে। তাই বলে কি তিনি মানুষ নয়? তার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মতো যোগ্যতা আছে কি না সেটা পরীক্ষা করে তারপর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানে যদি আমার সন্তান হতো তাহলে আমি নিয়োগ বোর্ডে থাকতে পারতাম না। আপনারা আইন বিবেচনা করে দেখবেন। আইনে কোথাও কোনো উপাচার্যের সন্তানকে নিয়োগ দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা নেই।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা থাকলেও তাদের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করা হয় না। তবে ভবিষ্যতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব।
এদিকে ওই বিভাগে প্রভাষক পদে আবেদনকারী প্রার্থী রুয়েট শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলীকে ভাইভা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের ভাইভা অনেক ভালো হয়েছিল। রুয়েট বাদেও বুয়েটের এক ভাই এখানে ভাইভা দিয়েছিলেন। এত ভালো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা থাকতেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেওয়া দুঃখজনক। নিয়োগ বোর্ড কীসের ওপর প্রাধান্য দিয়েছে সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন।
এদিকে রিজেন্ট বোর্ডের কার্যবিবরণী স্বাক্ষর হওয়ার আগেই রেজিস্টার কর্তৃক নিয়োগপত্র পেয়ে কর্মস্থলে যোগদান করেছেন ওই শিক্ষক।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মুরাদ হোসেন বলেন, ‘এটা উপাচার্য স্যার আলাদাভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। তবে নিয়োগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. কামরুজ্জামান নিয়োগের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিষয়টা সম্পূর্ণ প্রশাসনের ব্যাপার বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ জানিয়ে বলেন, বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষক নিয়োগে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা সুযোগ পাচ্ছে না। এমনকি বুয়েট, কুয়েট বা রুয়েটের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদ দিয়ে তৃতীয়/চতুর্থ ক্যাটাগরির কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য লজ্জাজনক। এখানে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অশুভ লক্ষণ। এখানে শুধু রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কিংবা প্রভাবশালী কারও খুঁটির জোরেই এমনটি হতে পারে। কিছু কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আমাদের ধারণা একদমই অপ্রীতিকর। আবার কোনো কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট বিক্রি করে। এটা দেখেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা চরম হতাশাজনক।
উল্লেখ্য, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়া অহনা আরেফিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের মেয়ে। তিনি নাটোরের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করেছেন। পার্টটাইম লেকচারার হিসেবে শিক্ষকতাও করেছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়া তিনি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা সহকারী হিসেবে ছিলেন।
এফএ/জেআইএম