দেশজুড়ে

স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবার জমি দখলে নিলেন সাবেক চেয়ারম্যান!

হাসিনা বানু নামে এক বিধবার ২০ শতক জমি দখল করে স্থাপনা গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দেবীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুর ইসলামের বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হাসিনা বানুর ছেলে হকিকুল ইসলাম সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সোমবার বিকেলে জাগো নিউজকে বিধবা হাসিনা বলেন, আমার স্বামী একজন পাগল ছিলেন। ‘আতিয়া পাগলা’ নামে তাকে সবাই চিনতো। তার কোনো স্বাভাবিক জ্ঞান ছিল না। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ইউনিয়নের রঙিয়ানী বাজারের আমার শ্বশুরের মালিকানা জমিতে বসবাস করে আসছি। গত বছর আমার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আমি মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছি।

তিনি আরও বলেন, স্বামীর মৃত্যুর একমাস পর হঠাৎ চেয়ারম্যানের নির্দেশে স্থানীয় জাহাঙ্গীর ও তার লোকজন জমি থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে যায়। আমরা না যাওয়াতে দুইমাস আগে আবার তারা রাতের আঁধারে এসে আমাকে মাটিতে ফেলে লাথি মারা শুরু করে। আর আমার দুই ছেলেকে বেঁধে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে দিয়ে বলে আজ রাতের মধ্যে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে। তারা দাবি করে এই জমি নাকি আমার স্বামী চেয়ারম্যানের কাছে বিক্রি করেছে। আমি এর কিছুই জানি না।

কথা বলার এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসিনা। তিনি বলেন, আমি খুব অসহায়। আমার চোখের সামনে স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ সম্বলটুকু দখল করে ইটের প্রাচীর দিচ্ছে চেয়ারম্যান। সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য জমিটা ফিরে পেতে চাই।

বিধবার ছেলে হকিকুল ইসলাম বলেন, সেদিন রাত ছিল খুব ভয়ঙ্কর। মারধর করে আমাদের উচ্ছেদ করে দিয়েছে সাবেক চেয়ারম্যানের লোকজন। গলায় ছুরি ঠেকিয়ে দিয়ে আমার বাবার জমি দখল নিয়েছে তারা। চেয়ারম্যান যদি জমি কিনেই থাকে তাহলে আমার বাবা মারা যাওয়ার আগে আসেনি কেন? এরপরও চেয়ারম্যান শুধু ১২ শতক জমি ক্রয় দেখাচ্ছেন। কিন্তু তিনি ২০ শতক জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। এর আগে আমাকে ধমক ও ভয় দেখিয়ে একটি আপসনামায় সইও করিয়ে নিয়েছে তারা।

সেদিনের রাতের ঘটনার বর্ণনা করেন স্থানীয় দোকানদার আবু বক্কর সিদ্দীক বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন যাবত আতিয়া পাগলাসহ তার পরিবারকে এখানে বসবাস করে আসতে দেখেছি। হঠাৎ রাতের অন্ধকারে তাদের মারধর করে জমি দখল করা হয়েছে। পরিবারটি খুব অসহায় প্রতিবাদ করার মানুষ নেই।’

স্থানীয় সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘কীভাবে চেয়ারম্যান জমির মালিকানা দাবি করছে আমি জানি না। আতিয়া পাগলা যতদিন বেঁচে ছিল ততদিন এসব কথা শোনা যায়নি। সে মারা যাওয়ার একমাস পর থেকে তাদের এসব ঝামেলা। এটার নিষ্পত্তি হওয়া দরকার।’

তবে আতিয়া পাগলার বড় ছেলে নাসিরুল ইসলাম ইসলাম বলেন, ‘জমির মালিক আমরা। বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় সাবেক চেয়ারম্যান জমি কেন দখল করলো না। মারা যাওয়ার এক মাস পরেই রাতের আঁধারে জমি দখল করে আমাদের মারপিট করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

আতিয়া পাগলার বন্ধু মোহম্মদ বাসের বলেন, ‘এখানে যে স্থাপনাটি নির্মাণ হচ্ছে সেটি পুরোপুরি অবৈধ। কিন্তু সমাজে এসব প্রতিবাদ করার মানুষ নেই। এক পরিবার কতটা অসহায় হতে পারে ক্ষমতার কাছে তার হাসিনা বানুকে না দেখলে বোঝা যাবে না। সাবেক চেয়ারম্যান আবার আওয়ামী লীগ নেতা। তার প্রভাবে আমরা কোনোকিছু বলার সাহস পাই না। প্রতিবাদ করে কী হবে? আমরা গরীব মানুষ।’

আমিনুল ইসলাম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘নিরীহ পরিবার বলে সাবেক চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারছে। আমাদের সঙ্গে এসব ঝামেলা করতে আসলে বুঝিয়ে দিতাম কত ধানে কত চাল। একটা পরিবারের ওপর এতটা জুলুম করা ঠিক না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘যা জানার সাবেক চেয়ারম্যান নূর ইসলামের কাছে জেনে নিন।’

সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নূর ইসলামের দাবি বলেন, ‘আমি ২০১০ সালে ওই বিধবা নারীর স্বামী থেকে জমি কিনেছি। আমার কাছে কাগজ আছে। আতিয়া পাগলার বড় ছেলে নাসিরুল সে সময় উপস্থিত ছিল।’

রাতের অন্ধকারে মারধর করে জমি দখলের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। বলেন, ‘জমিতে একটা পুকুর ছিল। আমি কেনার পর থেকে সেখানে মাছ চাষ করে আসছি।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, জমি দখলের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ নিয়ে ঘটনাস্থালে একাধিক কর্মকর্তাকেও পাঠানো হয়। পরিবারটিকে আদালতে বিচার চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। আদালতের নির্দেশ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তানভীর হাসান তানু/এসজে/জেআইএম