দেশজুড়ে

৬৪ জেলার মাটি দিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র বানালেন সেই মানিক

উন্মুক্ত গ্রন্থাগারের পর এবার ৬৪ জেলার মাটি সংগ্রহ করে বাংলাদেশের মানচিত্র তৈরি করেছেন বইপ্রেমী মানিক হোসেন। এ মানচিত্র থেকে ৬৪ জেলার মাটি স্পর্শ করা যাবে। পাওয়া যাবে একসঙ্গে সারাদেশের মাটির গন্ধও।

জানা গেছে, ২০০২ সালের এসএসসি ব্যাচের বন্ধুদের কাছ থেকে কুরিয়ার ও ডাকঘরের মাধ্যমে ৫৯ জেলার মাটি সংগ্রহ করেন মানিক। আর বাকি পাঁচ জেলার মাটি তিনি সরাসরি গিয়ে সংগ্রহ করেন।

দুই বছর চার মাসে সংগ্রহ করা মাটি দিয়ে তৈরি বাংলাদেশের মানচিত্রের দৈর্ঘ্য আড়াই ফুট, প্রস্থ তিন ফুট। কাঁচঘেরা একটি স্টিল ও কাঠের বাক্সে রাখা হয়েছে মানচিত্রটি।

মানিক হোসেন শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের গৈড্যা গ্রামের মৃত আক্তার হোসেনের ছেলে। মা তাছলিমা বেগম। ছয় বোন এক ভাইর মধ্যে তিনি ছোট। দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক লাইব্রেরি না থাকায় বইপড়া থেকে পিছিয়ে পড়ছিল উপজেলার মানুষ। তাই ভেদরগঞ্জবাসীকে বইমুখী করতে ২০১৮ সালের শেষের দিকে মানিক হোসেন গড়ে তোলেন ‘উন্মুক্ত গ্রন্থাগার’। সেই গ্রন্থাগারেই রেখেছেন মানচিত্রটি।

মানিক বলেন, উন্মুক্ত গ্রন্থাগারের পাশাপাশি চেয়েছিলাম ব্যতিক্রম কিছু করার। আমি ৬৪ জেলার মাটি দিয়ে মানচিত্র বানানোর স্বপ্ন দেখেছি। সেই স্বপ্ন আমার পূরণ হয়েছে। মানচিত্রর পাশাপাশি আমি বিভিন্ন মুদ্রা দিয়ে একটি তাক করেছি। এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার লাইব্রেরি ও মানচিত্র দেখতে মানুষ আসছে।

মানিকের মা তাছলিমা বেগম বলেন, ও যে কাজ করছে তা শুধু ওর নিজের জন্য নয়, আমাদের পরিবারের জন্য এবং এ দেশের জন্য গৌরবজনক।

মানচিত্র দেখতে আশা সাব্বির হোসেন, বিল্লাল হোসেন বলেন, ৬৪ জেলার মাটি সংগ্রহ করে তৈরি হওয়া বাংলাদেশের মানচিত্র দেখে অবাক হয়েছি। এমন সুন্দর কর্ম আর কখনো চোখে পড়েনি।

উজ্জ্বল সরদার বলেন, মানিক ভাই আমাকে একটি মানচিত্রের ডিজাইন দেখান। সেই ডিজাইন মোতাবেক তাকে স্টিল দিয়ে জেলা ভিত্তিক একটি মানচিত্র তৈরি করে দিয়েছি। সেই মানচিত্রর প্রতিটি গর্ত নাকি ৬৪ জেলার মাটি দিয়ে পূরণ করেছেন মানিক ভাই। মানুষ এখন মানচিত্রটি দেখতে আসেন। শুনে ভালো লাগছে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মশিউল আজম জাগো নিউজকে বলেন, আমি ঘুরে ঘুরে মানচিত্রটি দেখেছি। বিষয়টি আমার কাছে নতুন মনে হয়েছে। ৬৪ জেলার মাটি দিয়ে মানচিত্র করা হয়েছে এই প্রথম দেখলাম। মানচিত্রটি আমার অনেক ভালো লেগেছে।

ভেদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল বাশার চৌকদার জাগো নিউজকে বলেন, মানিক ৬৪টি জেলা থেকে সংগ্রহ করেছে মূল্যবান মাটি। যে মাটির রঙে ভিন্নতা আছে। আমি লাইব্রেরিতে গিয়ে মানচিত্রটি দেখেছি। তার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

লেখক ও শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনদীপ ঘরাই জাগো নিউজকে বলেন, মানিকের উন্মুক্ত গ্রন্থাগারের পাশাপাশি মানচিত্রটির কথা আলোচিত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো ওই মানচিত্রটি ছুঁয়ে দেখলে কিন্তু পুরো বাংলাদেশ ছুঁয়ে দেখা হয়ে যায়। মাটি আমাদের বড় একটি ব্যাপার। কারণ আমরা মা ও মাটিকে অনেক কাছাকাছি মনে করি। মানিকের উন্মুক্ত গ্রন্থাগারের উদ্যোগটাও দেশব্যাপী অনেক আলোড়ন তৈরি করেছে। আমি আশা করি, মানিক ৬৪ জেলার মাটি নিয়ে যে মানচিত্রটি করলো তা দেশ প্রেমের একটা স্মারক হয়ে থাকবে। আমরা সবাই ওর পাশে আছি।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) পারভেজ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ভেদরগঞ্জে বইপ্রেমী মানিক বেশ কিছুদিন আগে সুন্দর একটি লাইব্রেরি করেছে। শরীয়তপুরের মানুষ থেকে শুরু করে আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সেই লাইব্রেরিতে মানুষ আসছে। সম্প্রতি সে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মাটি সংগ্রহ করে একটি বাংলাদেশের মানচিত্র তৈরি করেছে। এমন চমৎকার একটি মানচিত্রের অবয়ব তৈরি হয়েছে যেটা দেখে আমরা ভীষণ আনন্দিত।

২০২১ সালে ‘অবসরে পড়তে ও ঘুরতে যাবেন মানিকের পাঠাগারে’ এবং ‘প্রবাসী মানিকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ ও একটি ফটো গ্যালারি জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কম-এ প্রকাশিত হয়।

মো. ছগির হোসেন/এসজে/জেআইএম