ধুলাবালুতে অতিষ্ঠ পটুয়াখালী পৌরসভার বাসিন্দারা। পৌর শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিও এখন ধুলায় আচ্ছাদিত। বাসা বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
চিকিৎসকরা বলছেন, বছরের অন্য সময়ের থেকে এ সময়ে রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। তবে ধুলাবালু ছড়ানোর বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) পুকুর খননের মাটি পরিবহনকে দায়ী করছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
দেশের পুরাতন জেলা শহরগুলোর মধ্যে পটুয়াখালী পৌরসভা অন্যতম। এ শহরে এবং এর আশপাশে তেমন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান না থাকায় এখানকার বায়ু অনেকটাই বিশুদ্ধ ছিল। তবে বর্তমান বছরে এ চিত্র পাল্টেছে। শহরের অভ্যন্তরে অনেকগুলো পুকুর পুনরায় খননের কাজ করছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। এসব খনন করা মাটি শহরের বিভিন্ন প্রান্তে খোলা ট্রলিতে করে পরিবহন করা হচ্ছে। পরিবহনের সময় ট্রলি থেকে মাটি রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে শুকানোর পর সেগুলো ধুলায় পরিণত হচ্ছে।
পাশাপাশি শহরে সরকারি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রীও খোলা ট্রলিতে পরিবহন করা হয়। এছাড়া সড়কের পাশেও নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা হচ্ছে। এসব কারণে পুরো শহরে ধুলাবালু উড়ছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পৌরবাসীর স্বাভাবিক জীবন।
পটুয়াখালী শহরের নবাবপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ‘বাসার জানালা দিনে কিংবা রাতে খোলাই যায় না। এক ঘণ্টা জানালা খোলা রাখলে বাসার সব ফার্নিচারের ওপর ধুলার আস্তরণ পড়ে সাদা হয়ে যায়। কোনো ড্রেস পরে একবার রাস্তায় নামলে ধুলোয় তা আর দ্বিতীয়বার পরার উপায় থাকে না।’
শহরের মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা রিফাত হাসান সজিব বলেন, ‘উন্নয়নের সমন্বয় থাকা প্রয়োজন, উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে যাতে কারো ভোগান্তির সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ পুকুর খননের মাটি পরিবহন করার সময় সেগুলো যাতে রাস্তায় না পড়ে সে বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার ছিল। এতে পৌরবাসীর ভোগান্তি হতো না।’
এদিকে এসব ধুলাবালুর কারণে বিগত বছরগুলো থেকে এ বছর পটুয়াখালী শহরের মানুষ ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। আর বিগত বছরগুলো থেকে এর সংখ্যা ৩০ শতাংশের বেশি বলে জানান পটুয়াখালী বক্ষব্যধী হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কনসালটেন্ট ডা. রেজাউর রহমান।
তিনি বলেন, মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে বাতাস শুষ্ক থাকে। ফলে বাসাতে ধুলাবালুর পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে অ্যাজমা, সিওপিডি এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা অসুস্থ হচ্ছেন বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে শ্বাসকষ্ট, হাঁচি,কাশির রোগী বেড়েছে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নির্মাণ কাজ বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ শ্রমিকরা সিরিকোসিস নামের একটি রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন আরজু জাগো নিউজকে বলেন, পুকুর খননের মাটি পরিবহনের কারণেই এ ধুলার সৃষ্টি। তবে কীভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এছাড়া ধুলা থেকে পৌরবাসীকে মুক্তি দিতে দিনে দুই বেলা রাস্তায় বিশেষ গাড়ির মাধ্যমে পানি ছিটানো হচ্ছে।
পটুয়াখালী এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী দিপুল কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, মাটি পরিবহনের সময় যাতে রাস্তায় না পড়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং প্রকল্পের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।
আব্দুস সালাম আরিফ/এসজে/জেআইএম