ঋতু বৈচিত্রের বাংলাদেশে বসবাস করে নানা জাতিসত্তার মানুষ। তাই উৎসব-পার্বণের সীমা নেই। এখানকার চা বাগানগুলোতেও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে আসছে শত বছর ধরে।
বাংলার শত বছরের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে অখণ্ড ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষা, বিহার, মাদ্রাজ, তেলেঙ্গানাসহ বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এসে আবাস গড়া চা শ্রমিকরাও। ভাষা ও সংস্কৃতিতে একেকটি চা বাগান যেন একেকটি দেশ। তবে ফাল্গুনের ‘ফাগুয়া’ উৎসবে এসে সবাই এক হয়ে তারা মেতে ওঠেন রঙের উৎসবে। দরিদ্র তবে পরিশ্রমী চা জনগোষ্ঠীর ফাগুয়াকে আরো রঙিন করে তুলতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ফাগুয়া উৎসবের আয়োজন করে ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদ।
চা জনগোষ্ঠী থেকে জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে নেতৃত্বে উঠে আসা ব্যক্তিদের সম্মেলনে শ্রীমঙ্গল শহরের অদূরে ফুলছড়া চা বাগানের মাঠে আয়োজন করা হয় এই ফাগুয়া উৎসবের।
রোববার (২৭ মার্চ) ফুলছড়া মাঠে নানান বয়সী হাজারো নারী পুরুষ আবির নিয়ে রঙের খেলায় মেতে উঠলে সবুজ চায়ের বাগানের হৃদয় কিছুক্ষণের জন্য হয়ে ওঠে নানান রঙে রক্তিম। উৎসবে কেবল রঙের হোলিই নয়, ছিল ভিন্ন সংস্কৃতির অন্তত ২০টি পরিবেশনা। পত্রসওরা, নৃত্যযোগী, চড়াইয়া নৃত্য, ঝুমর নৃত্য, লাঠিনৃত্য, হাড়িনৃত্য, পালা নৃত্য, ডং ও নাগরে, ভজনা, মঙ্গলা নৃত্য, হোলিগীত, নিরহা ও করমগীত একসাথে উপভোগ করতে পেরে যেমন আনন্দে ভেসেছেন চা শ্রমিকরা তেমন অভিভূত হয়েছেন উৎসবে আসা নাগরিক সমাজও।
ফাগুয়া উৎসব উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজারের ডিডিএলজি মল্লিকা দে। সঙ্গে ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, ইউএনও নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
ডিডিএলজি মল্লিকা দে বলেন, ফাগুয়া উৎসবটি আসলে ব্যতিক্রম। এমন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে ভালো লাগছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল করিম কীম বলেন, চা বাগানে পৌঁছাতেই কানে বাজলো পাহাড়িয়া মাদলের সুর। চা বাগানের অন্য পাড়ায় গিয়েও চোখে পড়লো একই দৃশ্য। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, মধ্যবয়সী সবাই নাচছে- গাইছে- আনন্দ করছে। অনেক আয়োজন দেখেছি তবে এমন আয়োজন প্রথম দেখলাম। চা বাগানের মানুষের কৃষ্টি সংস্কৃতি এতো সুন্দর না দেখলে বুঝতে পারতাম না।
আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব কালিগাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা বলেন, দ্বিতীয় বারের মতো এই আয়োজন হলেও আয়োজনটি জাতির জনককে উৎসর্গ করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে চা শ্রমিকদের এটি একটি বিশেষ আয়োজন। আশা করি পরের বছর আরো বড় আয়োজনে ফাগুয়া উৎসব করা হবে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, চা বাগানের কৃষ্টি সংস্কৃতি যেন কোনোভাবে বিলুপ্ত না হয় সেজন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ফাগুয়া উৎসব যেন বন্ধ না হয় সেজন্য আমরা কিছু সহযোগিতা করেছি। এই সুন্দর সংস্কৃতি রক্ষার দায়িত্ব সবার। এটি যেন প্রত্যেকবার করা যায় সেজন্য আমরা কিছু পরিকল্পনা করছি।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন চা শ্রমিক সন্তান প্রকাশ ভর ও মিনা রবিদাশ।
আব্দুল আজিজ/এফএ/জিকেএস