লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ছাত্রদের দিয়ে মো. রাসেল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের এলকেএইচ উপকূলীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে স্কুলড্রেস পরা ছাত্রদের ইট বহন করতে দেখা গেছে। এ সময় বাধা দিলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন- ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনির হোসেন মোল্লা। ভুক্তভোগী রাসেল হোসেন স্থানীয় মোল্লার হাটের টেলিকম ব্যবসায়ী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়নের চরকাছিয়া গ্রামে বিদ্যালয়টির পাশে রাসেলদের ৩৯ শতাংশ জমি রয়েছে। শুরুতে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার রাস্তা না থাকায় রাসেলদের জমি ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। এখন বিদ্যালয়ের পাশ দিয়েই সরকারিভাবে পাকা রাস্তা হয়েছে। এতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পুরাতন রাস্তা বন্ধ করা হয়। হঠাৎ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জমির মালিক রাসেলদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা দাবি করেন। ওই টাকা না দেওয়ায় রাসেলকে হুমকি দেন। এ নিয়ে রাসেল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনজন দাশের কাছে লিখিত অভিযোগ অভিযোগ দেন।
সোমবার দুপুরে শিক্ষক মিজানুর রহমান ও সভাপতি মনির মোল্লা ছাত্রদের নিয়ে রাসেলের জমির সুপারি গাছ কেটে ফেলেন। সয়াবিনসহ বিভিন্ন ফসল কেটে দেন। পুরাতন রাস্তাটি পুনরায় ইট দিয়ে তৈরির চেষ্টা করা হয়। এতে রাসেলসহ তার স্বজনরা বাধা দিলে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ব্যবসায়ী মো. রাসেল অভিযোগ করে বলেন, ‘স্কুলের পাশেই সরকারি রাস্তা রয়েছে। কিন্তু শিক্ষক মিজান ও আওয়ামী লীগ নেতা মনির মোল্লা আমার জমি দখলের পাঁয়তারা করছেন। আমার জমির সুপারি গাছসহ বিভিন্ন ফসল কেটে ফেলেছেন। জমিতে নিরাপত্তা দেওয়ালের (বাউন্ডারি) জন্য ইট এনেছি। সেই ইট মিজান ও মনির মোল্লা ছাত্রদের দিয়ে আমার জমিতে রাস্তায় বানিয়েছে। মনির মোল্লা আমার আরও একটি জমি দখল করে রেখেছেন।’
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘জমি দখল করা হয়নি। সেখানে রাস্তা ছিল। রাস্তাটি দিয়ে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী চলাচল করতো। সাবেক জেলা প্রশাসক টিপু সুলতান ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলে সেখানে সলিং করা হয়। সম্প্রতি রাসেল রাস্তাটির ইট তুলে নিয়ে যায়। এখন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনির হোসেন মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্কুলের শুরু থেকেই রাস্তাটি ছিল। রাসেলসহ তার লোকজন সেখান থেকে ইট সরিয়ে নিয়েছে। এখন তারা জোরপূর্বক সেখানে ইট দিয়ে ঘর নির্মাণ করে দখলের চেষ্টা করছিল। আমি ছাত্রদের দিয়ে ইট নিয়ে আবার রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছি।’
হাজীমারা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (তদন্ত) ইউসুফ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনাস্থল পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। স্কুল শিক্ষক-ছাত্রদের ও জমির মালিককে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।
রায়পুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম সাইফুল হক জাগো নিউজকে বলেন, জমি দখলের অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। জমি দখলের কাজে ছাত্রদেরকে ব্যবহার করা যাবে না। তবে প্রধান শিক্ষক আমাকে জানিয়েছে সড়ক সংস্কারের কাজ করেছে তারা।
কাজল কায়েস/এসজে/জেআইএম