চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তদের মাঝে ভাতার কার্ড বিতরণের নামে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফটিক আলী ও আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রায় ২০ জন ভুক্তভোগী।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় গত রোববার ধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তদের মাঝে ভাতার কার্ড বিতরণ করেন ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ। এসময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ফটিক আলী ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবদুল মালেক দেড় শতাধিক সুবিধাভোগীর কাছ থেকে ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ আদায় করেন। বেশ কয়েকজন সুবিধাভোগী অর্থ দিয়েও মেলেনি কার্ড।
সেরিনা নামে এক ভুক্তভোগী জাগো নিউজকে বলেন, বেশ কিছুদিন আগে স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য ফটিক আলী আমাকে বিধবা ভাতার কার্ড দেওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়েছিল। চারদিন আগে আমি জানতে পারি, আমার কার্ডের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আমি সেই বিধবা ভাতার কার্ড আনতে গেলে টাকা ছাড়া কার্ড দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় ফটিক। পরে এক হাজার টাকা দিয়ে কার্ড নিয়ে এসেছি।
জাবেদা বেগম নামে এক স্বামী পরিত্যক্তা নারী বলেন, মেম্বার ফটিক আমার কাছে বিধবা ভাতার কার্ডের জন্য দেড় হাজার টাকা নিয়েছে। আমি ধার করে তাকে টাকা দিয়েছি। সরকার তো এগুলো কার্ডের টাকা নেয় না। আমি ফটিকের বিচার চাই।
এছাড়া নাজরিন, রোজিনা ও হালিমা নামে তিন নারী বলেন, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আবদুল মালেক আমাদের কাছে বিধবা ও বয়স্ক ভাতার কার্ড দেওয়ার জন্য এক মাস আগে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়েছিল। কয়েকদিন আগে আমাদের কার্ড হয়ে গেছে বলেও জানায়। তবে কার্ড আনতে গেলে এক হাজার টাকা ছাড়া কার্ড দেওয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। পরে টাকা দিয়ে আমরা কার্ড নিয়ে এসেছি।
তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য ফটিক আলী ও আবদুল মালেক। তারা দাবি করেন, এসব মিথ্যা। আর এ বিষয়ে ধাইনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ধাইনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদের মণ্ডল বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নিয়মবহির্ভূত কাজ করেছেন। তার নির্দেশে সমাজসেবা কার্যালয়ের নাম ভাঙিয়ে ভাতাভোগীদের কাছ থেকে এক থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত টাকা আদায় করা হয়েছে। এতে বর্তমান সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। অভিযুক্তদের শাস্তি হওয়া দরকার।
জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাকিব আল রাব্বী লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস বলেন, ইউপি সদস্য ফটিক ও আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অর্থআদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।
সোহান মাহমুদ/এমআরআর/এএসএম