জাতীয়

উপাত্ত সুরক্ষা আইন ডিএসএর মতো নিবর্তনমূলক হবে, আশঙ্কা টিআইবির

উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২২ (খসড়া) আইনের বিধানসমূহের অস্পষ্টতা ও যথাযথ সংজ্ঞায়নের অভাবসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির নিরঙ্কুশ ক্ষমতার কারণে এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ)-২০১৮ এর মতো নিবর্তনমূলক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

টিআইবির মতে, খসড়ায় উপস্থিত নানা অস্পষ্টতা ও অসংগতির কারণে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার নামে এই তথ্যের ওপর প্রশাসনিক ও সরকারি নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি তৈরি হবে।

সোমবার (৯ মে) ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২২ (খসড়া): পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানায় টিআইবি। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে খসড়া আইনটি বিশ্লেষণ সাপেক্ষে এর উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা ও আইনটি প্রণীত হলে তা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জসহ বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

টিআইবি জানায়, এই আইনের মাধ্যমে বিরুদ্ধ মত নিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীন মত প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চেতনা ও সাংবিধানিক অঙ্গীকারের সম্পূর্ণ বিপরীত।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো নাগরিকদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ডিজিটাল স্পেসে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় নিয়ে এই আইনটি প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আইনটিতে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে। আইনে উপাত্ত সুরক্ষা কার্যালয় স্থাপন ও প্রধান হিসেবে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালককে সীমাহীন ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যার অনেকগুলো আবার বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত বিভিন্ন মানবাধিকার ও বিশেষ করে গোপনীয়তার অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

মহাপরিচালকের এই সীমাহীন ক্ষমতার ব্যবহার বা অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার বা কোনো আইনগত প্রতিকার পাওয়ার বিধান আলোচ্য খসড়াতে অন্তর্ভুক্ত না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।

অন্যদিকে, খসড়া আইনের ধারা-৬৬ তে সরল বিশ্বাসে কৃত কার্যক্রমের জন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংশ্লিষ্টদের দায়মুক্তির বিধান রাখা হয়েছে। এতে একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে সরকারের নিকট আপিল করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা আছে। কিন্তু এর ফলে উক্ত ব্যক্তির গোপনীয়তা বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে অধিকতর ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে টিআইবি।

ব্যক্তিগত তথ্যের আইনগত সুরক্ষা দেওয়ার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে এই খসড়ায় বিদ্যমান উদ্বেগজনক দিকসমূহ উল্লেখ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, আইনের খসড়ায় যে সকল অস্পষ্টতা রয়েছে তাতে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার নামে ব্যক্তিগত তথ্যের উপর সরকারি ও মূলত প্রশাসনিক মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে করে সংবিধান স্বীকৃত বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা সুরক্ষার অধিকার ব্যাপকভাবে খর্বিত হবে।

‘খসড়ায় এমন কিছু শব্দ ও ধারণা উল্লেখ করা হয়েছে যার কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। এর ফলে আইনের বিভিন্ন ধারার অপব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে। আইনের শিরোনামটিও বিভ্রান্তিকর এবং এটি পরিবর্তন করে ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন’ করা উচিৎ।’

‘তাছাড়া, আইনের প্রস্তাবনাও দুর্বল, বিশেষ করে সংবিধানের ৪৩ (খ) অনুচ্ছেদে যেভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, তা এই প্রস্তাবনায় উল্লেখিত থাকলে এই আইনে সংবিধানের অঙ্গীকার ও চেতনা প্রতিফলিত হতে পারতো।’

টিআইবি থেকে সুপারিশ করা হয়, আইনটি বাস্তবায়নের জন্য উন্নত বিশ্বের আদলে একটি স্বাধীন ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

এছাড়া আইনটি পাশের আগে কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতা আছে এবং একই সঙ্গে যারা প্রচুর পরিমাণে ব্যক্তিগত তথ্য প্রক্রিয়া করে এমন বিশেষ কিছু খাতে আইনের বিধানসমূহ পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। সে অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে পরের ধাপে ও পর্যায়ক্রমে এর পরিধি বাড়ানো যেতে পারে।

ভার্চুয়াল এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের ও খসড়া আইনটি পর্যালোচনায় টিআইবিকে সহায়ক ড. মুহাম্মদ এরশাদুল করিম। উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২২ (খসড়া)- এর ওপর টিআইবির পর্যালোচনা ও সুপারিশসমূহ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম।

এইচএস/এমপি/এএসএম