দেশজুড়ে

চিংড়ির রেণুর বলি কোটি মাছের পোনা

বরগুনার পায়রা ও বিষখালী নদীর বিভিন্ন স্থানে চলছে চিংড়ি রেণু সংগ্রহের মহোৎসব। এতে প্রতিদিনই ধ্বংস হচ্ছে নদীতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির কোটি কোটি মাছের পোনা, জুপ্লাংকটন ও জলজ প্রাণী। হয় সরু ফাঁসের জালে নয়তো খাদ্যাভাবে পোনা অবস্থাতেই মারা পড়ছে মাছের প্রজাতিগুলো। যা দেশের মৎস্য সম্পদের জন্য বড় হুমকি।

২০০২ সালের সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে গলদা, বাগদাসহ সব ধরনের রেণু পোনা আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। তবে তার কোনো তোয়াক্কা করছে না উপকূলের অসাধু জেলেরা।

নদীর পাড়গুলোতে গেলে দেখা যায়, প্রতিদিন শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ সবাই মিলে চিংড়ির রেণু নিধনের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। কেউ নদীতে জাল টানছেন, আবার কেউ তীরে বশে কাঙ্ক্ষিত বাগদা চিংড়ির পোনাগুলো অন্য পাত্রে রেখে অন্য মাছের পোনা, জুপ্লাংকটন ও জলজ প্রাণীগুলো নদী তীরে ফেলে দিচ্ছেন।

মধ্যবয়সী জেলে মোস্তাফিজ বলেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ রেণু ধরতে পারেন তাতে তার ১২শ থেকে ১৫শ টাকা আয় হয়। যা এই সময়ে অন্য কাজের থেকে বেশি লাভজনক। তাই রেণু আহরণ করছেন।

অবৈধ জেনেও কেন করছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, তিনি একা বন্ধ করলেইতো সবাই বন্ধ করবে না। ঠিকই অন্য জেলেরা রেণু ধরবে, তাহলে তার বন্ধ রেখে কী হবে।

রেণু আড়তদার জয়নাল ফরাজি জানান, মাঝে মধ্যে মৎস্য বিভাগ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান হয়, তখন তাদের জরিমানা বা গ্রেফতার হতে হয়। তবে পেটের তাগিদে আবার শুরু করেন অভৈধ এ কাজ।

তার হিসাব অনুযায়ী শুধু বরগুনা জেলার পায়রা ও বিষখালী নদীর সাড়ে ৪শ থেকে ৫ পয়েন্টে কয়েক হাজার মানুষ এ কাজের সঙ্গে জড়িত।

একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপের বরাত দিয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জাগো নিউজকে বলেন, নদীপাড়ে যারা বাগদা বা গলদা চিংড়ির রেণু ধরছে তারা একটি রেণু ধরতে গিয়ে প্রায় ১৫০টির বেশি অন্য প্রজাতির চিংড়ি, ৩০টির বেশি বিভিন্ন সাদা মাছ, সাড়ে ৫শ টি জুপ্লাংকটন ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী মেরে ফেলছে। তারা মাছের প্রজাতিগুলোকে পোনা অবস্থায় যেমন ধ্বংস করছে ঠিক তেমনি মাছের খাদ্য চক্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এতে বেঁচে থাকা মাছেরও খাদ্যাভাব তৈরি হচ্ছে।

মৎস্য সম্পদের এমন ক্ষতি বন্ধে তাদের কার্যক্রমের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, জেলেদের সচেতন করতে কাজ করছেন তারা। জেলেদের সচেতন করা গেলে জেলেরাই বন্ধ করবে রেণু পোনা আহরণ। তবে বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

এফএ/জেআইএম