দেশজুড়ে

হবিগঞ্জে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ২৪০০ আবেদন পেন্ডিং

পেশাদার গাড়িচালকদের জন্য ডোপটেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। তবে হবিগঞ্জে সরকারিভাবে এখনো চালু হয়নি এ সেবা। অপরদিকে রয়েছে সফটওয়্যার জটিলতাও। ফলে হবিগঞ্জে প্রায় তিনবছর বন্ধ ছিল নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু এবং নবায়ন কার্যক্রম। চলতি বছর লাইসেন্স দেওয়া শুরু হলেও তা চলছে ধীরগতিতে।

এরই মধ্যে পুরোনো-নতুন মিলে লাইসেন্সের জন্য ২ হাজার ৪০০ আবেদন অপেক্ষমাণ অবস্থায় রয়েছে। এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন জেলার গাড়িচালকরা।

তবে দ্রুত জেলায় সরকারিভাবে ডোপটেস্ট কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নুরুল হক।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে হবিগঞ্জে কয়েকটি ক্লিনিক ডোপটেস্ট করছে। কিন্তু তারা জনপ্রতি ১৫০০ টাকা করে নিচ্ছে বলে জেনেছি। ডোপটেস্ট কিটের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখেছি। বরাদ্দও হয়েছে। আশা করছি দ্রুত তা চালু সম্ভব হবে। এতে সরকারি ফি পড়বে ৯০০ টাকা। সরকারিভাবে চালু হলে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোও দাম কমাবে।’

সিভিল সার্জন আরও বলেন, ‘এখন সরকারি চাকরিতেও ডোপটেস্ট লাগে। তবে সরকার যেহেতু গাড়ি চালকদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে তাই তাদের আপাতত অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। দ্রুত তাদের সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পেশাদার গাড়িচালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ডোপটেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে। তবে হবিগঞ্জে এখনো সরকারিভাবে এ সেবা চালু হয়নি। ফলে নতুন লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে চালকদের। অনেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সিলেট কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ডোপটেস্ট করিয়ে আনছেন। এতে সময় ও অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি বেড়েছে ভোগান্তিও।

এদিকে আগে যে কোম্পানি (টাইগার আইটি লিমিটেড) লাইসেন্স ও নবায়নের কাজ করতো তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন নতুন করে মাদ্রাজ সিকিউরিটি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছে পুরাতন লাইসেন্সের ডাটা না থাকায় সেগুলো নবায়ন করতে পারছে না। বিআরটিএ অফিসেও এক্সেস না থাকায় দেখতে পারছে না। এখন আগের কোম্পানি ডাটাগুলো ট্রান্সফার করে দিলে নবায়ন পুরোদমে শুরু হবে বলে আশা করছে বিআরটিএ।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক সজিব আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা মাদকসেবীর তকমা নিয়ে রাস্তায় গাড়ি চালাতে চাই না। আমরা ডোপ টেস্ট দিতে রাজি আছি। কিন্তু সেটা হবিগঞ্জে ব্যবস্থা করে দিতে হবে। গরিব চালকরা সময় নষ্ট করে ভাড়া লাগিয়ে সিলেট অথবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়ে ডোপ টেস্ট করবে কেন?’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘লাইসেন্স ইস্যু কার্যক্রমের পূর্বের কোম্পানির চুক্তি বাতিল হয়েছে। নতুন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে সম্প্রতি। ফলে পূর্বের কোম্পানির কাছে থাকা আবেদনগুলো সফটওয়্যার জটিলতার কারণে প্রায় তিনবছর ধরে নবায়ন, সংশোধন ও ডুপ্লিকেট লাইসেন্স ইস্যু বন্ধ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘তবে সম্প্রতি নতুন চুক্তিবদ্ধ কোম্পানি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে। পূর্বের আরও ২ হাজার লাইসেন্স অপেক্ষমাণ আছে। আশা করছি দ্রুতই তাদেরটাও দেওয়া সম্ভব হবে।’

ডোপটেস্ট জানুয়ারি থেকে চালু হয়েছে উল্লেখ করে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এখন ডোপটেস্টের জন্যও কিছু সমস্যা হয়। তবে যারা ডোপটেস্ট এনে দিচ্ছে তাদেরটা হয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের আবেদনের মধ্যে এ পর্যন্ত পেন্ডিং আছে প্রায় ৪০০ আবেদন। তবে এগুলো ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এসজে/এমএস