দেশজুড়ে

৬ বিঘা জমি গেছে দুঃখ নেই, পদ্মা সেতু চালু হলো এতেই খুশি নাসির

পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ছয় বিঘা জমি দিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী মো. নাসির জমাদ্দার। তার বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের মাইনুদ্দিন জমাদ্দারকান্দিতে।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনে শনিবার (২৫) বিকেলে জমাদ্দার বাসস্ট্যান্ডে তার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের।

নাসির জমাদ্দার জানান, শরীয়তপুর অংশে পদ্মা সেতুর জন্য তার পুরো পরিবারকে ২০ বিঘা জমি দিতে হয়েছে। তিনি দিয়েছেন ছয় বিঘা। অধিগ্রহণের জন্য সরকার থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ পেয়েছেন। তবে পুরোনো বসতভিটার জন্য এখনো তার মন কাঁদে। তবে পদ্মা সেতুতে অবদান রাখায় গর্ববোধ করেন নাসির জমাদ্দার। নিজেকে পদ্মা সেতুর একজন অংশীদার মনে করেন তিনি।

নাসির জমাদ্দার বলেন, ‘পদ্মা সেতুর জন্য সরকার আমাদের জায়গা-জমি নিয়েছে, তারপরও আমরা খুশি। সরকার যেটা করেছে ভালোর জন্য করেছে। আজ পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলো। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। পদ্মা সেতু হওয়ায় আমার ও শরীয়তপুরের মানুষের উপকার হয়েছে। জমির জন্য কষ্ট হলেও আজ আমরা খুশি। এটা ভেবে ভালো লাগছে যে পদ্মা সেতুর জন্য আমি জমি দিয়েছি।’ তার মতো ওই এলাকার আব্দুর রউফ খালাশী, রশিদ মাদবর, রাজ্জাক হোসেন, রশিদ মিয়া ও জয়নাম জমাদ্দারও পদ্মা সেতুর জন্য জমি দিয়েছেন।

সেতুর জন্য আব্দুর রউফ খালাশীর পরিবারকে ২৭ বিঘা জমি দিতে হয়েছে। তারপরও তিনি খুশি। আব্দুর রউফ বলেন, ‘জমি দিতে হয়েছে তাতে কী? পদ্মা সেতু চালু তো হয়েছে। এতেই আমরা খুশি।’

গত আট বছর ধেরে নাওডোবা পুনর্বাসন কেন্দ্রে বসবাস করছেন রাজ্জাক হোসেন ও রশিদ মিয়া। পদ্মা সেতুর জন্য তাদের জমি দিতে হয়েছে। তাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছিল। পুরো পরিবার নিয়ে থাকতেন। জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকার দেড়গুণ টাকা দিয়েছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রে তারা সরকার থেকে জমি কিনে বাড়ি করেছেন।

রাজ্জাক হোসেন ও রশিদ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাড়ি ও জমি গেছে তাতে কোনো দুঃখ নেই। পদ্মা সেতু চালু হয়েছে এতেই আমাদের সুখ।’

বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর সড়কপথে রোববার (২৬ জুন) ভোর ৬টা থেকে সবধরনের যান চলাচল শুরু হবে।

২০০১ সালের ৪ জুলাই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এ সেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে।

পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার।

পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।

বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্বপ্নের কাঠামো নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।

মো. ছগির হোসেন/এসআর/জিকেএস