সাহিত্য

গোরস্থানে বসে করি জীবনের কাব্য পাঠ

আমি গোরস্থানে বসে করি জীবনের কাব্য পাঠসারি সারি শুয়ে আছে নিশ্চল নিথর এক একটা জীবন যাদের পদভারে মুখরিত ছিল একসময় এই ধরিত্রীকোণের চার্চ থেকে ভেসে আসছে ঘণ্টাধ্বনি যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে একদিন আমাকেও যেতে হবে তবুও গাছে গাছে মুখরিত কাকাতুয়ার দল মেতেছে শোরগোলেমনে হচ্ছে যেন ইসরায়েলি কামান গোলা দাগছে নিরীহ ফিলিস্তিনেশীতের তীব্রতা ভেদ করে আজ জেগেছে সূর্যজানান দিয়ে যাচ্ছে তার উপস্থিতি সুতীব্র উত্তাপে মৃদুমন্দ বাতাসে শরীর জুড়িয়ে আসে আমার হয়তো বা গোরবাসীদেরওপাশের রাস্তায় মাঝেমধ্যে শো শো শব্দে ছুটে যাচ্ছে যান্ত্রিক যানআবারও ঘণ্টাধ্বনি বেজে উঠলো প্রতি পনেরো মিনিট পরপরই বেজে ওঠে আপন নিয়মে। মেঘগুলো আজ খুশিতে যেন সূর্যের সাথে খেলছে লুকোচুরি পাশের পার্কে যেমন শিশুর দল মেতেছে পিকাবু খেলায়আমি বসে আছি একটা কবরের শান বাঁধানো দেওয়ালে মনে হয় যেন অনন্তকাল ধরে বসে আছি, আছি নিজের শেষ দিনের অপেক্ষায় আমরা কি সবাই এভাবে অপেক্ষায় থাকিযদি থাকি তাহলে কেন এতো হানাহানি কানাকানি চারিদিকে বিশ্বের মোড়ল তেলের গ্যালনের দামে শান্তি বিক্রির পসড়া নিয়ে বসেছেযেখানে যত তেল সেখানে তত বেশি তার খবরদারি আরব বসন্তের নামে চলছে শান্তির প্রচারতার নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে ইয়েমেনের ক্ষুধার্ত শিশুর স্বরধরিত্রী আজ নিজের কান্না থামিয়ে হয়েছে সেইসব শিশুর খাদ্যমাটি খেতে খেতেই তারা শুয়ে পড়ে ধরিত্রী মায়ের কোলেকেউ বা ওঠে আবার কেউ চিরঘুমে শুয়ে থাকে গোরস্থানের মানুষের মতোশকুনও আজ ক্লান্ত, আর কত মানুষের মাংস খাবেসেও হয়তো বা স্রষ্টার কাছে করে ফরিয়াদ তার জীবনের অন্ত চেয়েসে আর দেখতে চায় না জীবনের অপচয় আবারও ঘণ্টাধ্বনি বেজে উঠলো ঢং ঢংএভাবে বাজতেই থাকবে যতদিন এই পৃথিবীতে থাকবে মানুষের বসবাসমানুষ নিজের জীবনের জন্য সৃষ্টি করেছিল যে সভ্যতা সেই সভ্যতায় আজ তাকে করেছে বর্বর, হয়েছে বিলীনের হাতিয়ার আচ্ছা, মৃত্যুর পরে কি কোনো জীবন থাকে, হয় কি দেখা সবার সাথে আবারও কি সেখানে তৈরি হয় কোনো অদেখা মানব সভ্যতার সেখানেও কি আছে এই ধরিত্রীর মতো মৃত্যসেই মৃত্যুও কি দেয় জন্ম অন্য কোনো একটি সভ্যতার হয়তো বা হয় হয়তো বা হয় না, হলেও আমরা তো আর দেখি না এই দেখা-না দেখা, এই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে চলে জীবনের জয়গান আবারও ঘণ্টাধ্বনি বেজে উঠলো আচ্ছা, আমি ঘণ্টাধ্বনিকে কেন জীবনের অন্তিমের আহ্বান ভাবছিনাকি গোরস্থানে আছি বলেই আমি আজ নিরাশায় আক্রান্ত কাকাতুয়াগুলো ডেকে চলেছে এখনো অবিরাম বিশ্বব্যাপী বেজে চলেছে যুদ্ধের জয়ডঙ্কা হয়তো বা এটাই জীবনের নিয়ম, এটাও জীবনের অংশ আমি আর গোরস্থানে আসবো না ভাবছিকারণ এলেই আমাকে আলিঙ্গন করতে চায় মৃত মানুষগুলো নাকি আবারও আসবো নিজের অন্তিমের কথা ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিতেখাই খাই দুনিয়ার সবকিছু থেকে নিজেকে আড়াল করতে আবারও আসবো গোরস্তানেকারণ গোরস্থানে কবরের উপরে আমি দেখেছিলাম বেগুনি ফুলমাটির নিচে রয়েছে জীবনের শেষ আর তার উপরে জীবনের ফুলেল জয়গান আহা, এ এক অনবদ্য কাব্য যা ফুরোয় না কোনোদিন।

এসইউ/এমএস