ঈদ মানে আনন্দ। আপনজনদের সঙ্গে এ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে চায় সবাই। তাই শত ভোগান্তি নিয়েও বাড়িতে ফিরে মানুষ। তবে এই উৎসবের দিনও কিছু পেশার মানুষের জীবনে নেই অবসর, মিলে না ছুটি। পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে উৎসবের ঊর্ধ্বে চলছে তাদের জীবন। পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও প্রিয়জনরা যখন ঈদের আনন্দ নিয়ে ব্যস্ত, তখন বাড়তি টাকা আয়ের জন্য ইজিবাইক বা রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তারা।
রোববার (১০ জুলাই) ঈদের দিন সকালে রিকশা নিয়ে বের হন আবরার হোসেন। তিনি বলেন, সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে মন চায়। কিন্তু দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারে সে সুখ জোটে না। আজ কামাই না হলে, কালকে চলবো কেমনে? তাই ঈদের দিনেও বের হতে হয়।
একই কথা ষাটোর্ধ্ব রিকশাচালক সিরাজুল ইসলামের। তিনি বলেন, রোজার ঈদে রিকশা চালিয়ে অনেক টাকা ইনকাম হইছিল। যদিও কোরবানির ঈদে ইনকাম খুবই কম। তারপরেও ইনকামের আশায় রিকশা নিয়ে বের হইছি। দিনে এনে দিনে খাই, একদিন বন্ধ দিলে পরের দিন কী খামু?
রাজধানীর নিয়মিত রিকশাচালক ছাড়াও দুই ঈদে বেড়ে যায় মৌসুমি রিকশাচালক। বাড়তি আয়ের জন্য ঈদের সময় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে রিকশা চালাতে আসেন অনেক শ্রমিক। তেমনি একজন আজিম।
তিনি বলেন, সাত বছর আগে ঢাকায় রিকশা চালাইতাম। এখন আবার তিন মাস হলো রিকশা চালাইতাছি।
কিন্তু রমজানের ঈদে ইনকাম বেশি ছিল, এখন কম। কারণ কোরবানির ঈদে লোকজন কাজে ব্যস্ত থাকে। তাই যাত্রী কম হয়। এসময় একজন যাত্রী বললেন, যাবেন গোড়ান, কত দিতে হবে? রিকশাচালক বললেন, আপনি বলেন। যাত্রী বললেন, ৮০ টাকা দেবো। আজিম বললেন, ১০০ টাকা দিয়েন, ঈদের দিন। পরে যাত্রী উঠার পর চলে গেলেন তিনি।
রাজধানীর ভিআইপি রোডগুলোতে রিকশা চালানো নিষেধাজ্ঞা থাকে সারা বছরই। আর শাহবাগ, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় রিকশার আনাগোনা সবসময় বেশি দেখা যায়। কিন্তু ঈদের কারণে রাজধানীর প্রায় সব রাস্তায় অবাধে রিকশা চলাচল করে।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সামনে লালমনিরহাটের এক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। বাড়ি গেলেন না কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দিকের রাস্তার কী অবস্থা হয়েছিল সবই দেখেছেন। ২২ ঘণ্টার ৩৬ ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকার চেয়ে ঢাকায় রিকশা চালিয়ে কিছু ইনকাম করা ভালো। কমপক্ষে ১৫দিন পরে বাড়ি যাবো চিন্তা করেছি।
তিনি বলেন, সকাল ৭টার ঈদের জামাত শেষে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। কিন্তু কামাই নেই। যাত্রী কম। এখনো একজন রিকশায় উঠেনি। তবে রমজানের ঈদে যাত্রীর চাপ বেশি থাকে। ইনকামও বেশি হয়।
তিনি আরও বলেন, ১৫ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছিলাম, করোনার আগে পরিবারের সবাইকে বাড়ি পাঠাইয়া দিছি। এখন আমি একাই ঢাকায়। করোনার সময় মানুষ ভাড়াও বেশি দিতো ওই সময় ৭০ টাকার ভাড়া একশ টাকা দিতো। এখন আর দেয় না।
ফরিদপুর থেকে আসা রিকশাচালক মো. সালেকের সঙ্গে কথা হয় মৎস্য ভবনের মোড়ে। তিনি বলেন, ঈদের সময় ব্যাপক লোক বাড়িতে যায়, ভিড় হয় ভাড়াও বেশি তাই বাড়িতে যাইনি। যদি একটু ইনকাম করা যায়। কিন্তু আজ যাত্রী নেই। রোজার ঈদে দুই হাজার ৫০০ টাকা ইনকাম করছিলাম। দেখি দিন শেষ কী হয়।
ঈদের দিন বিকেল ৩টায় অটোরিকশা নিয়ে বের হন চালক ফিরোজ। তার সঙ্গে কথা হয় যাত্রাবাড়ীর পাশের রাস্তায়। তিনি বলেন, আমাদের অটোরিকশা তো মেইন রোডে অবৈধ। কিন্তু চায়না থেকে এসব অটোরিকশা আমদানি করে প্রচুর টাকা ইনকাম করছে অনেকে।
গাড়ির মালিক নিজে নাকি ভাড়ায় চালিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, অটোর মালিক আমি না, ভাড়ায় চালাই। মালিককে প্রতিদিন ৪০০ টাকা জমা দিতে হয়। দৈনিক এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা আয় হয়। কিন্তু আজ মালিক কোনো জমা নিবো না। তাই আজ যা আয় হইবো, সবই আমার থাকবো।
এফএইচ/আরএডি/এএসএম