৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নির্মিত হয় পূর্ব ধনীরাম সেতু। সেতুটি উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ধনিরাম গ্রামের পূর্ব ধনীরাম খালে নির্মিত হয়। কিন্তু উদ্বোধনের তিনমাসেই সেতুটি ভেঙে যায়। এতে চরম বিপাকে পড়েন সেতু সংলগ্ন একটি সরকারি আবাসনের ৮০টি পরিবারসহ আশপাশের ছয় গ্রামের মানুষ।
উপায় না পেয়ে এলাকাবাসী নিজেরাই অর্থ সংগ্রহ করে একটি ড্রামের ভেলা তৈরি করেন। সেই ভেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায় চার বছর ধরে খালটি পারাপার হচ্ছে ওই এলাকার বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৬ টাকা ব্যয়ে তৈরি হয় সেতুটি। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ ফুট। ২০১৮ সালের ১ আগস্ট উদ্বোধন করার পর ২৯ অক্টোবর সেতুটি ভেঙে পড়ে। এরপর থেকেই সেতুটি সংস্কারে প্রশাসনের কাছে দফায় দফায় আবেদন করা হলেও তা এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত প্রায় চার বছর ধরে ভেঙে পড়া সেতুটি প্রশাসন থেকে একাধিকবার পরিদর্শন করা হলেও সেটি সংস্কার কিংবা পুনর্নির্মাণের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নিরুপায় হয়ে চলাচলের জন্য এলাকাবাসী নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে একটি ড্রামের ভেলা তৈরি করে। সেই ভেলায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাল পারাপার হতে হয় লোকজনকে। যার ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। বিশেষ করে অসুস্থ ব্যক্তিদের নিয়ে পড়তে হয় চরম বেকায়দায়।
পূর্ব ধনিরাম গ্রামের জয়নাল আবেদীন বলেন, এই ব্রিজটি হওয়ার তিনমাসের মধ্যে ভেঙে পড়ে। আজ প্রায় চার বছর হলো এ অবস্থায় পড়ে আছে। আমরা খুব কষ্ট করে চলাচল করছি। দুঃখের কথা কী বলবো, আমাদের দুর্দশা আর ভোগান্তি সারাজীবনই বুঝি থেকে যাবে। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো তাকে হাসপাতালে নিতে পারি না।
একই এলাকার জোলেখা বেগম বলেন, ব্রিজটি হওয়ার কিছুদিন পরেই ভেঙে গেছে। ব্রিজ ভাঙার চার বছর হলো তবুও এখানকার মানুষের যাতায়াতের সমস্যার সমাধান হলো না। ছোট ছোট বাচ্চারা স্কুল ও মাদরাসায় ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে। বাচ্চাদের বাইরে পাঠিয়ে আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় থাকি।
রমিছা বেগম নামে আরেক এক নারী বলেন, আমার মনে আছে ব্রিজটি ২০১৮ সালের আগস্টের ১ তারিখ উদ্বোধন হয়ে অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখ ভেঙে যায়। সরকার এতগুলো টাকা দিয়ে ব্রিজটি করলো অথচ আমরা এর সুফল ভোগ করতে পারলাম না। আমাদের গ্রামবাসীর স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে গেলো। এখন ড্রামের ভেলা করে পারাপার হতে হচ্ছে।
বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান মিন্টু বলেন, আমার ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরাম এলাকার ব্রিজটি নির্মাণের তিন মাসের মধ্যেই ভেঙে যায়। এতে করে স্থানীয়রা খুবই ভোগান্তিতে আছে। টেকসই পরিকল্পনার অভাবে ব্রিজটির এই দুরবস্থা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমার আবেদন টেকসই পরিকল্পনা করে যেন পূর্ব ধনিরাম ব্রিজটি আবারও নির্মাণ করা হয়।
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সবুজ কুমার গুপ্ত বলেন, পূর্ব ধনিরাম গ্রামের খাল পাড়ে নতুন করে ব্রিজের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। যদি ব্রিজটি পুনর্নির্মাণের অনুমোদন দেয় তাহলে সেখানে ব্রিজ হবে। অনুমোদন না আসলে আর হবে না।
সেতুটির মান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সেতুটি নির্মাণের কোনো ত্রুটি ছিল না। ২০১৮ সালের বন্যায় স্রোতের চাপে সংযোগ সড়ক ভেঙে ব্রিজটি দেবে যায়।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ব্রিজটি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। ওখানকার মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমআরআর/এএসএম