বিনোদন

‘সিলেটে সালমান শাহর বাড়ির পাশ দিয়ে গেলেও ভালো লাগতো’

শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের বড় একটা অংশ সিলেটে কাটিয়েছেন জানিয়ে সময়ের আলোচিত অভিনেতা  শরিফুল রাজ বলেছেন, আগে সিলেটে অনেক সিনেমা হল ছিল। তখন স্কুল ফাঁকি দিয়ে এক টিকিটে দুই সিনেমা, কাটপিসসহ অনেক সিনেমা দেখেছি। অথচ সেই সময় সিনেমা কী জিনিস সেটিই বুঝতাম না। তবে এবার খালা, বোনসহ আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে একসঙ্গে সেই সিলেটে সিনেপ্লেক্সে বসে নিজের অভিনীত সিনেমা ‘পরাণ’ দেখতে পেরে খুবই খুশি লাগছে।

সোমবার (২২ আগস্ট) বিকেলে সিলেটের পাঁচতারকামানের গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল ও রিসোর্টের মুভি-থিয়েটার সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে এসে শরিফুল রাজ এসব কথা বলেন। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় সিলেট নগরে কাটানো তার শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের স্মৃতিচারণ করেন।

 শরিফুল রাজ বলেন, ‘সিলেট আমার শহর। এটি আমার কাছে শুধু শহর না, আমার খুব প্রিয় শহর, নিজের শহর। আমার দাদা বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হলেও আমার বাবার বাড়ি কিন্তু সিলেটে। এই সিলেটে আমার একটা কলোনি লাইফ ছিল। আম্বরখানা সরকারি কলোনিতে আমি বেড়ে উঠেছি। এই কলোনির অনেকের সঙ্গেই আমার অনেক মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আব্বু সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। এরপর তিনি সিলেটে ডিজিএফআইয়ে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘদিন সেই সুবাদে এই আম্বরখানা কলোনিতে আমার জীবনের বড় একটা সময় থাকা।’

‘এই কলোনির লাইফটা অনেক মজার ছিল’ জানিয়ে আলোচিত এ অভিনেতা বলেন, ‘এখানে আমার অনেক ভালো বন্ধু ছিল। এখনো সিলেটের সেসব বন্ধুর সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। সিলেট এসেছি, রাতে আম্বরখানা কলোনিতে যাবো। যারা আছেন আমাদের সময়ের তাদের সঙ্গে দেখা করবো। এছাড়া বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে।’

বড় হয়ে কী হওয়ার স্বপ্ন ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে রাজ বলেন, ‘আসলে ছোটবেলায় আমার তেমন স্বপ্ন ছিল না। একবার ডাক্তার হতে চাইতাম, আবার ইঞ্জিনিয়ার। কখনো আর্মির অফিসার হতে চাইতাম যেহেতু আব্বু আর্মিতে চাকরি করতেন, তাই হয়তো। তবে অনেক কিছু হতে গিয়ে বারবার ফেইলর হয়েছি। কিন্তু আমার সিলেটের বন্ধুরা আমাকে উৎসাহ-সাহস ও লেগে থাকার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। বলতে পারি বন্ধুদের কারণে আমি আজ অভিনেতা হতে পেরেছি।’

নিজের শিক্ষাজীবনের কথা জানাতে গিয়ে অভিনেতা রাজ বলেন, ‘জীবনের প্রথম স্কুল সিলেট নগরের শাহী ঈদগাহ। শাহ মীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলের পাশে আবহাওয়া অফিসের মাঠে অনেক খেলেছি, দুষ্টুমি করেছি। এরপর সিলেট নগরের এইডেড হাইস্কুল ও মদনমোহন কলেজে পড়ালেখা করেছি। শুধু স্কুল-কলেজ না, কালচারাল অ্যাক্টিভিটিতেও ছিলাম, রেড ক্রিসেন্টের মেম্বার। সবমিলিয়ে আমার মানসিকভাবে বড় ওঠা সিলেটে।’

প্রয়াত অভিনেতা সালমান শাহর বাড়ি সিলেটে। আপনিও সিলেটে বেড়ে উঠেছেন। সালমান শাহ আপনাকে কোনো প্রভাবিত করেছেন কি, এমন প্রশ্নের জবাবে শরিফুল রাজ বলেন, ‘আধুনিক বাংলা সিনেমার জগতে সালমান শাহর মতো এত সুর্দশন ও আধুনিক কোনো অভিনেতা ছিলেন কিনা আমার জানা নেই। তিনি এই দেশের অনেক মানুষের প্রিয় অভিনেতা ছিলেন। আমার প্রিয় অভিনেতা সুপারস্টার সালমান শাহ। যদিও কোনোদিন আমি সালমান শাহকে দেখিনি। কিন্তু তার বাড়ির পাশ দিয়ে স্কুলে যেতাম। সালমান শাহের বাড়ি পাশ দিয়ে স্কুলে যেতে পেরেও অনেক খুশি লাগতো। অন্যরকম ফিলিংনস হতো। আব্বুর সঙ্গে অনেকবার হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে গিয়েছি। সেখানে মাজার জিয়ারত করার পরপরই আমার প্রিয় নায়ক সালমান শাহর কবর জিয়ারত করেছি। কবর দেখতে গিয়েছি, একটু দোয়া করে এসেছি। এককথায় তিনি আমাদের সুপারস্টার ছিলেন।’

রাজ বলেন, ‘আমার খুব কাছের বন্ধু-বান্ধব হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, নয়তো সিলেটে। সিলেট ছাড়ার পরও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, এখনো আছে। তারাও ঢাকায় যেতো, আমি সিলেট আসতাম। জীবনে অনেক কিছুতেই ফেইলিয়র হয়েছি, কিন্তু ওরা আমাকে ইন্সপায়ার করেছে হাল না ছাড়ার জন্য। এখন অনেকেই সিলেটে নেই, একেকজন একেক দেশে। যারা সিলেটে আছে, তাদের সবার সঙ্গে দেখা করবো। তাদের বাড়িতে যাবো।’

জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হলেও সিলেটের জন্য আলাদা মায়া আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আব্বুর অবসরের পর সিলেটেই থেকে গেলেন। সিলেটকে খুব পছন্দ করেন। আব্বু সিলেট শহরতলীর বটেশ্বরে বাসা করেছেন, সেখানেই থাকেন। সেই সূত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আমার দাদার বাড়ি, সিলেট আমার আব্বুর বাড়ি। সিলেট আমার দীর্ঘ ১২-১৩ বছরের জার্নি, অনেক লম্বা জার্নি।’

২০০৩ সালের সিলেট আর ২০২২-এর সিলেট শহরের কতটা পরিবর্তন হয়েছে জানতে চাইলে অভিনেতা রাজ বলেন, ‘আগে সিলেটে ২০-২৫টি সিনেমা হল ছিল। বন্দরবাজারে সবচেয়ে বেশি সিনেমা হল ছিল। স্কুল পালিয়ে গিয়ে বন্দরে বা তালতলায় অথবা বিডিআর সিনেমা হলে এক টিকিটে দুই ছবি দেখতাম। যদিও সিনেমা কী জিনিস অতটা বুঝতাম না। কিন্তু এখন সিলেটের বন্দরবাজারে কোনো সিনেমা হল নেই। সিলেটে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। প্রিয় শহর সিলেট অনেকটাই বদলে গেছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে রাজ বলেন, ‘আগে সিলেটে সপরিবারে সিনেমা দেখার এত ভালো পরিবেশ ছিল না। এই প্রথম নিজের অভিনীত সিনেমা ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ সিলেটে এসেছে। অনলাইনে দেখলাম সিনেমা দুটি সিলেটে খুব ভালো চলছে। এবং একজন সিলেটের বন্ধু আমাকে ফেসবুকে বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে এখানে আমার সিনেমা দেখার ছবি পাঠিয়ে বলেছেন, যে তিনি তার বাবাকে জন্মদিনে বলেছিলেন, ‘তুমি কী চাও আজ বলো?’ তার বাবা বলেছেন, সিনেপ্লেক্সে গিয়ে ‘পরাণ’ ছবি দেখতে চাই। এতে বোঝা যায় সব বয়সের মানুষ এখন সিনেমামুখী হচ্ছেন এবং বাংলা সিনেমার সুদিন ফিরে আসছে।’

স্ত্রী পরীমণি, নতুন অতিথি রাজকে নিয়ে কেমন কাটছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শরিফুল রাজ বলেন, ‘খুবই ভালো। ছেলেকে খুব মিস করছি। আমি আজ রাতেই তার কাছে চলে যাবো। আর পরীমণি ওয়াইফ হিসেবে বিউটিফুল, একজন আর্টিস্ট হিসেবেও বিউটিফুল এবং একজন মা হিসেবেও বিউটিফুল। আমি খুবই হ্যাপি পরীমণির মতো একজন বউ পেয়ে।’

নিজের অভিনীত সিনেমা দেখার পর বিকেল পৌনে ৬টায় সিনেপ্লেক্সে উপস্থিত দর্শকদের সঙ্গে কৌশল বিনিময় করেন অভিনেতা শরিফুল রাজ এবং ভক্তদের সঙ্গে ছবি তোলেন।

ছামির মাহমুদ/এসআর/কেএসআর/এমএস