সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার। আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) পরিচালক।
৩১ বছরের কর্মজীবনে কাজ করেছেন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বার্জার পেইন্ট ও এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডসে। এরপর বদলে গেছে তার ক্যারিয়ারের গল্প। ট্র্যাক বদলে যোগ দেন ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানিতে। বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মানি ইউনিয়নের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন দীর্ঘ সাত বছর। সবশেষ প্রায় ১০ বছর আছেন মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের সঙ্গে।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামালের কর্মজীবন ও তরুণরা কীভাবে কর্মজীবনে সফল হতে পারে সে বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক ইসমাইল হোসাইন রাসেল।
জাগো নিউজ: আপনার শিক্ষাজীবন কেটেছে কোথায়?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমার পড়াশোনার বড় অংশ চট্টগ্রামে। আমার দাদা চাকরির সুবাদে ওখানে গিয়েছিলেন। যদিও আমার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম নয়। আমার স্কুল চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল। কলেজ কমার্স কলেজ, এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। আর এমবিএ করেছি কানাডা থেকে। প্রফেশনালি অনেক ট্রেনিং করতে হয়েছে।
জাগো নিউজ: মাস্টারকার্ডে আছেন অনেকদিন। এর আগের কর্মজীবনের গল্পটা শুনতে চাই।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ডে আমার দশম বছর চলছে। এর আগে আমি ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের কান্ট্রি ম্যানেজার ছিলাম। এরও আগে বড় একটি সময় এসিআই-এ কাজ করেছি। বার্জার পেইন্টসে কাজ করেছি দীর্ঘসময়।
আরও পড়ুন>> নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য চমক আনছে মাস্টারকার্ড}
জাগো নিউজ: আপনার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট কোনটি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমি ক্যারিয়ারে বড় একটি রিস্ক নিয়েছিলাম। শুরুতে আমার ক্যারিয়ার ছিল এসিআই আর বার্জার পেইন্টে। এরপর আমি মাল্টিন্যাশনাল থেকে ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি ওয়েস্টার্ন মানি ইউনিয়নে যোগ দিলাম। কনজ্যুমার থেকে ফাইন্যান্সিয়ালে যাওয়ার বিষয়টি কম দেখা যায়। আমি সেই বিষয়টিই বেছে নিয়েছিলাম। তবে ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরে ঢুকেও আমি কখনো কোনো ব্যাংকে কাজ করিনি, এটাও একটা ব্যাপার আছে। সেক্ষেত্রে আমার ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনে যোগ দেওয়া এবং রেমিট্যান্সে একটা হাতেখড়ি বলি। এরপর আমি পেমেন্ট সেক্টরে যোগ দিলাম, যেটা মাস্টারকার্ডে এসে আমি গত ১০ বছর কাটিয়েছি।
জাগো নিউজ: তরুণরা যারা আপনাদের মতো ক্যারিয়ার গড়তে চায় তাদের জন্য কোনো পরামর্শ?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমি সব সময় বলি যেটি করবে সেদিকে সম্পূর্ণ মনোযোগী থাকো। যেটা করছো সেটি মনোযোগ দিয়ে করো। যখন মনে করবে এটার জন্য তুমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছো মুভ অন, নতুন কিছু করো। তরুণদের এখনো একটা গ্যাপ থাকে, সঠিক পরিকল্পনা করতে পারে না। পরিকল্পনাটা মূলত ক্যারিয়ারের মূল ভিত্তি। মনোযোগ দিয়ে যদি কোনো কাজ করে এবং সেটিকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারলে কিন্তু ভালো কিছু করতে পারবে।
আরও পড়ুন>> রিটার্ন বাধ্যতামূলক করায় কমেছে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু}
আমাদের তরুণদের ইদানীং দেখা যায় খুব দ্রুত মুভ করে। কিছু বিষয়ে বদল করা ভালো, কিন্তু ইন্ড্রাস্ট্রি পরিবর্তন করলে ভাবতে হবে আমি যে কাজটি করছি সেটি কি পর্যাপ্ত? যেখানে যাবো সেখানে আমি কী শিখবো। নতুন জায়গায় গিয়ে দুই-তিন বছর থেকে আবার বদল করলাম, সেটি উচিত নয়। কোনো একটা এরিয়াতে কাজ করলে বারবার বদল করা ঠিক নয়। তাহলে স্পেশালাইজেশনটা হবে না।
আমি ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে লম্বা সময় কাজ করেছি, এখনো রেমিট্যান্স নিয়ে যদি কোনো কিছু হয় মানুষজন আমার সঙ্গে কথা বলে, কারণ ওই সময়টায় আমি হয়তো কিছু করতে পেরেছি, এটা হওয়া উচিত। আপনি যদি মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন কিছু প্রভাব যদি সোসাইটিতে ফেলতে চান তাহলে অবশ্যই এই জায়গাটিতে সময় নিয়ে কাজ করা উচিত।
জাগো নিউজ: অনেকে মনে করেন মাথার ওপর ছায়া না থাকলে ক্যারিয়ারে ভালো করা যায় না?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: এটি আমার মনে হয় না। এখনকার জগতে এটি হয় না। এমএনসির ৫০টি প্রতিষ্ঠান পেয়ে যাবেন যেখানে বাংলাদেশি সিইও আছে। কীভাবে সম্ভব হয়েছে, তারা তো সিইও হয়ে জয়েন করেননি। তারা ছোট ছোট থেকে আজ এই অবস্থায় উঠেছে। আমরা বলি আমাদের এখন ট্যালেন্ট আছে এবং মাথার ওপর ছায়ার গল্পটা আসলে মাথায় না নেওয়াই ভালো। যখন আমাকে কেউ বলে তদবির করার জন্য, আমি অনেককেই বলি তদবির কেন লাগবে? তোমার প্রমোশন অটোমেটিক হবে। কেন আমার ফোন করতে হবে প্রমোশনের জন্য। আমার মনে হয় ছায়ার গল্প থেকে সরে আসতে হবে, ছায়া সব জায়গায় কাজে লাগে না।
আইএইচআর/এএসএ/জেআইএম