কুড়িগ্রামে ফের শুরু হয়েছে তিস্তা নদীর ভাঙন। গত একমাস ধরে এই ভাঙনে বিলীন হয়েছে শতাধিক বাড়িঘর, ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। অনেকে আশ্রয় না পেয়ে ঠাঁই নিচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ভাঙনকবলিতরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিন গ্রামের মানুষ হারিয়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়িঘর। ভাঙনে বিলীন হয়েছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির, ঈদগাহ মাঠ, বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদরাসা, পুরাতন বজরা বাজার ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া গত তিনদিনে তিস্তার পেটে গেছে ৩০/৪০টি বাড়ি।
বজরা পশ্চিমপাড়া গ্রামের নূর বখত বলেন, হঠাৎ তিস্তার ভাঙনে অনেক বাড়িঘর, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও একটি মন্দির স্কুল বিলীন হয়েছে। পরশুদিন থেকে ভয়াবহতা বেড়েছে। না জানি আমাদের কপালে কী আছে?
একই ওই গ্রামের শুক্কুর আলী বলেন, গত তিনদিনের নদী ভাঙনের বসতভিটা হারিয়েছি। আমার কোনো জমিজমা নেই। কোথায় আশ্রয় নেবো জানি না। এখন রাস্তায় আছি। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা শুধু দেখেই যাচ্ছে, সহযোগিতা করার মতো কেউ আসলো না।
পশ্চিম বজরা ঈদগাহ মাঠের সভাপতি মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, তিস্তার ভাঙনে মানুষের আর্তনাদ শোনার কেউ ছিল না। যে যার ঘরবাড়ি রক্ষায় ব্যস্ত ছিল। দুপুরে থেকে রাতের মধ্যে আমাদের ঈদগাহ মাঠটি নদীতে চলে যায়। নতুন ঈদগাহ মাঠের জায়গা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
পশ্চিম বজরা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. আবু তালেব মুসা বলেন, একরাতেই তিস্তার তীব্র ভাঙনে ক্লিনিকটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা ক্লিনিকের ওষুধপত্র, আসবাব সরিয়ে নিতে পেরেছি। তবে ক্লিনিক রক্ষা করতে পারিনি।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমার বলেন, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ভাঙন কবলিতদের নামের তালিকা করতে বলা হয়েছে। তালিকা হাতে পেলেই সহযোগিতার কাজ শুরু করা হবে।
তিনি আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আমরা ভাঙনের বিষয়গুলো আপডেট করেছি। বাজেট না থাকায় তারা মুভমেন্ট করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন। তবে খোলা আকাশের নিচে কেউ থাকলে সেটা এখনো আমার নজরে আসেনি। জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তিস্তার ভাঙনের তীব্রতার কারণে আপদকালীন প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। তবুও আমরা কাজ করছি। ভাঙনরোধে প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমআরআর/জেআইএম