কী হয়েছি?
আমি একটা কাঁচের বৈয়াম হলেও হতো;ভেঙে যেতে পারি—এ ভয়ে হলেও আগলে রাখতে।আমি তোমার আলমিরার চাবি হলেও হতো;হারাবার ভয়ে কোমরে কিংবা হ্যান্ডব্যাগে সামলে রাখতে।যদি তোমার খাবারের থালা হতাম!প্রতিবেলা শুরুর আগেই ধুয়ে রাখতে।যদি তোমার নরম নাকের নাকফুল হতাম;ঘুমে কিংবা জাগরণে ছুঁয়ে থাকতে।তোমার শোবার ঘরের আয়না হলেও হতো;তোমাকে দেখানোর ছলে নিজে তোমায় দেখে নিতাম।ক্যামেরার লেন্স হলেও মন্দ হতো না;তোমার ছবি তোলার ফাঁকে খানিক তোমায় রেখে নিতাম,মেখে নিতাম।চার সংখ্যার গোপন পাসওয়ার্ড হলেও হতো;নিয়ম করে আমায় মনে রাখতে।আমি তোমার নাম হলে সবচে’ ভালো হতো;আজীবন তুমি পরিচয়ের খোলসে আমার থাকতে।কিছুই পারলাম না—হয়ে গেছি সামান্য ঢেউ,যাকে অর্জনে কোনো শ্রম-ঘামের হিসেব করতে হয়নি তোমার।তাই অর্জনের আনন্দও নেই আকাঙ্ক্ষাও নেইআদর কিংবা অনাদরও না!তীরে এসে আছড়ে পড়েছি অবুঝ খেলায়।অযতনে রেখো না। দেখে নিও...একদিন চলে যাবো ভাটার পিছুটানেতোমাদের অবহেলায়-হেলায়।
****
শমন
খুব দরকার দরজা বন্ধ করে দেয়া।ঝড় আসছে। পিঠে নিয়ে ধুলো আর জল।প্রবল শক্তিশালী বাতাসের ঝড়।আমার দরজার ছিটকিনি নষ্ট হয়ে গেছে বহুদিন আগে।ইচ্ছে করেই হয়তো নষ্ট থাকতে দিয়েছি।দরজা ঠেলে একরাশ ধুলো ঢুকে গেছে বাতাসের ইশারায়।এলোমেলো হয়ে গেছে টেবিলে রাখা পাণ্ডুলিপি।প্রবল বাতাসে।তীব্র আগ্রাসে।এই বাতাস...দরজাটাকে আঘাত করছে বারবার।অসহায় হয়ে পুরাতন কাঠের দরজাটা বলছে—শমন প্রয়োজন। শমন। যাকে তোমরা দমন বলো!ঝড় ঢুকতে দেয়া ঠিক হয়নি হয়তো।দরজা ভেঙে যাচ্ছে।ঘর ভেসে যাচ্ছে জলে।ঝড়ের ডেকে আনা জলে।শমন। শমন। যজ্ঞে পশু বলি দেওয়াকেও নাকি শমন বলে!বলি হচ্ছে ঘর-দরজা;বলি হচ্ছি আমিও।ঝড়ের হাতে। পরের হাতে।অথচ নিজের জীবন নিজের হাতে থামিয়ে দেয়া ছিল ঢের গৌরবের!
****
দু’একটা মানুষ হারিয়ে যায়
সামান্য বৃষ্টিতে এ শহরের তেমন একটা কিছু যায়-আসে না।কারো ব্যাগ থেকে ছাতা বের হয়;কারো ব্যাগটাই ভিজে যায়।কোথাও আঘাতে ঠাসা রাস্তা ডুবে যায়;কোথাও জলের তলে মানুষ—নিজে যায়।আমি এই শহরের এমন কিছু শিশুকে চিনি, যারা ঝরা ফুলের মতো বৃষ্টিকণা কুড়োতে পারে।আমি এই শহরের এমন কিছু স্বর্ণকার চিনি,যারা কুড়োনো বৃষ্টির ফোটা দিয়ে অলঙ্কার বানাতে পারে।আমি এই শহরের এমন কিছু ব্যবসায়ীকে চিনি, যারা বৃষ্টিকণার মুক্তোয় বানানো মালা কৌশলে বিক্রি করে।তোমার জন্য একটা কিনেছিলাম।যত্ন করে রেখেছিলাম বুক পকেটে।তারপর?আমার চোখ থেকে ঢলভাঙা জল এসেমিশে গেছে সেই অলঙ্কারের সাথে।বৃষ্টি আর অশ্রু এখন আর আলাদা করা যায় না।সব জল হয়ে গেছে।সব জল।আমি এক কামারকে বলেছি;আমার পকেট থেকে জলগুলো নিয়ে যেন ভেঙেচুড়ে একটা মেঘ বানিয়ে দেয়।সে বৃষ্টির অলঙ্কার আর অশ্রুর অহংকার ভেঙেচুড়ে—একটা মেঘ বানিয়েছে।একান্ত ব্যাক্তিগত মেঘ।দেখো, সেই মেঘটা ভেসে বেড়াচ্ছে ঠিক তোমার মাথার ওপরে।আমি যখন আজ শহর ছেড়ে চলে যাবো,সেই মেঘ ভেঙে দু’এক ফোটা করে বৃষ্টি—তোমার কপালে এসে পড়বে।আমার অশ্রু বৃষ্টির ছদ্মবেশে তোমায় ছুঁয়ে যাবে;তুমি জানতেও পারবে না।তবে কি জানো তো, সামান্য বৃষ্টিতে এ শহরের তেমন একটা কিছু যায়-আসে না।শুধু দু’একটা মানুষ হারিয়ে যায়।
এসইউ/জিকেএস