দেশজুড়ে

‘মেশিনোত ভোট দ্যাওয়া হলো না হামার’

গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নতুন এ অভিজ্ঞতা নিতে অধীর আগ্রহে ছিলেন দুই উপজেলার চর দ্বীপচরের ভোটাররা। ইভিএম সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও আগ্রহের শেষ ছিল না তাদের।

তবে শেষ পর্যন্ত এ অভিজ্ঞতা নেওয়া হয়নি তাদের। অনিয়মের অভিযোগে এ উপ-নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

ব্রহ্মপুত্রপাড়ের বাজে ফুলছড়ি গ্রামের বয়স্ক ভোটার শরৎ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী সরোবালা রানী (৬২)। লেখাপড়ায় তিনি অজ্ঞ। স্থানীয় ও জাতীয় সব নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু এবার উপ-নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেওয়া নিয়ে অনেক আগ্রহ ছিল তার।

সরোবালা রানী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার নাকি মেশিনোত ভোট দিবের নাগছে সগলে (এবার নাকি সবাই মেশিনে ভোট দিচ্ছে)। মুই তো মেশিনটা দ্যাখোমই (দেখি) নাই। জীবনে মেলা ভোট দিছোম (দিছি)। মেশিনোত ভোট দ্যাওয়ার নাগি ভোট সেন্টারোত আচ্চোম (মেশিনে ভোট দিতে কেন্দ্রে এসেছিলাম)। ভোট বলে বন্ধ হইয়্যা গেছে? মেশিনোত আর ভোট দ্যাওয়া (দেওয়া) হলো না হামার (আমার)।’

একই কথা বলেন ওই গ্রামের মৃত হালিম মিয়ার স্ত্রী নবিজন বেওয়া (৫৫)। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘হামরা সারাজীবন ভোট দিলেম কাগজোত সিল মারিয়া (কাগজে সিল মেরে)। এবার বোলে মেশিনোত ভোট দ্যাওয়া নাইগবে (লাগবে)। দ্যাখোম (দেখবো) কেমন করি মেশিনোত ভোট দেয় সেইজন্যে আচ্চোম (এসেছি)। আসি দ্যাখোম ভোটে বন্দ হইয়্যা গেছে।’

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘মোর খুব ইচ্ছা আছিল মেশিনটা এ্যাকনা দেখিম (আমার খুব ইচ্ছা ছিল মেশিনটা একবার দেখবো)। ভোটের মেশিন ক্যাংকা হয় (ভোটের মেশিন কেমন হয়)। তাক (তবে) আসি শোনোম (শুনি) ভোট বন্দ।’

প্রথমবার ভোট দিতে আসা বগুড়া আজিজুল হক কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কলেজ খোলা থাকার পরও এসেছি ইভিএমে ভোট দেবো। সিসি ক্যামেরা নাকি দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে। কোন পোলিং এজেন্ট নাকি অন্য একজনকে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করেছেন। ভোট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি আর ভোট দিতে পারিনি।’

বুধবার (১২ অক্টোবর) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শুরুতেই অনিয়ম, কারচুপি, জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল এবং গোপন কক্ষে বিভিন্ন লোকজনের উপস্থিতির অভিযোগ আসতে থাকে নির্বাচন কমিশন। এসব অভিযোগে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ৪৩টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে ইসি। পরে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নির্বাচন বন্ধের ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন ছাড়া একযোগে বাকি চার প্রার্থী ভোট বর্জন করেন। ভোট বর্জন করা প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, বিকল্পধারার জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এরপর তফসিল অনুযায়ী শুরু হয় ভোটগ্রহণ। কিন্তু বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয় নির্বাচন।

জানতে চাইলে এ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রধান কার্যালয় ভোট বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অফিস থেকে কোনো নির্দেশনা না পেলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবেন না।

এসআর/এএসএম