দেশজুড়ে

পিটিয়ে বৃদ্ধ এসলামের হাত ভেঙে দিয়েছে বিএসএফ, ফেটে গেছে মাথা

‘আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অঝোরে কাঁদতে থাকি কিন্তু তবুও তারা নির্যাতন থামায়নি। এ সময় তাদের রাইফেল উল্টো করে ধরে আমার হাতে আঘাত করলে আমার বাম হাত ভেঙে ঝুলে যায়। তাদের আরেকজন লাঠি দিয়ে মেরে আমার মাথাও ফাটিয়ে দেয়। এতে আমার পরনে থাকা লুঙ্গি-গেঞ্জিসহ শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়। পা দিয়েও আমাকে ইচ্ছামতো নির্যাতন করে। পরে তারা চলে যায়।’

এভাবেই জাগো নিউজের কাছে বিএসএফের নির্যাতনের বর্ণনা দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক এসলাম আলী (৬৫)। বুধবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার মাসুদপুর সীমান্তের বাংলাদেশ ভূখণ্ডের দশবিঘি এলাকায় ঢুকে তাকে বেদম প্রহার করেন বিএসএফ সদস্যরা।

শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি আসেন এসলাম আলী। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে।

কৃষক এসলাম আলী বলেন, ‘বাংলাদেশ ভূখণ্ডের দশবিঘি এলাকায় কৃষিজমিতে আমার ছেলে আব্দুর রহিম ও আমি পাট কাটছিলাম। এ সময় সীমান্তের ওপারের ভারতের দৌলতপুর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে রাইফেলের বাট দিয়ে আমাকে ও আমার ছেলেকে ভয়াবহ নির্যাতন করতে থাকে। এতে ভয় পেয়ে আমাকে রেখেই পালিয়ে যায় আমার ছেলে রহিম। একজন বিএসএফ সদস্য রহিমকে ধরার জন্য অনেক দূর দৌড়েও যায়। তাকে ধরতে না পেরে তারা সবাই মিলে আমাকে ইচ্ছামতো পেটাতে থাকে। এতে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অঝোরে কাঁদতে থাকি। কিন্তু তবুও তারা নির্যাতন থামায়নি।’

তিনি বলেন, ‘এ সময় তাদের রাইফেল উল্টো করে ধরে আঘাত করলে আমার বাম হাত ভেঙে ঝুলে যায়। তাদের আরেকজন সদস্য লাঠি দিয়ে মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়। এতে আমার পরনে থাকা লুঙ্গি-গেঞ্জিসহ শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়। তারা পা দিয়েও আমাকে ইচ্ছামতো নির্যাতন করে। পরে তারা চলে যায়। তখনো আমি পাটক্ষেতে রক্তান্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে রয়েছি। পরে আমার ছেলে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

চোখের পানি মুছতে মুছতে নির্যাতনের শিকার কৃষক এসলাম আলী বলেন, ‘কোনো অপরাধ না করেও আমাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

এসলাম আলীর ছেলে আব্দুর রহিম বলেন, ‘সকাল থেকেই ক্ষেতে পাট কাটছিলাম আব্বা ও আমি। দুপুরের সময় কাজ প্রায় শেষের পথে। এ সময় হঠাৎ ৩-৪ জন বিএসএফ সদস্য আমাদের দিকে তেড়ে আসে। এসেই আমাকে মারতে থাকে। এ সময় অনেক ভয় পেয়ে আমি পালিয়ে যাই। তবে আমার বাবাকে ধরে ফেলে। এবং তাকে ইচ্ছামতো আঘাত করে।’

তিনি বলেন, ‘তারা পিটিয়ে আমার বাবার বাম হাত ভেঙে দিয়েছে। আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। বাবার সারা শরীরেই আঘাতের চিহ্ন। পরে বিএসএফ সদস্যরা চলে গেলে বাবাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ভর্তি করা হয়।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, আহত এসলাম আলীকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে আনা হয়েছে। এমন ঘটনা কেন ঘটলো তা জানতে বিজিবির সঙ্গে আমি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।

তিনি আরও বলেন, এসলাম আলী অত্যন্ত ভালো মানুষ। তার সঙ্গে এমনটা দুঃখজনক।

এ বিষয়ে ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাহিদ হোসেন বলেন, এ ঘটনার পরে ব্যাখ্যা চেয়ে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছিল। গতকাল পতাকা বৈঠক হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, এমন ঘটনা আসলে খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। এখন বিএসএফের মধ্যে তো ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অনেক ধরনের মানুষ রয়েছে। কেউ হয়তো নিজ ইচ্ছায় এমন কাজ করতে পারেন। তাই তারা জানিয়েছেন বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নির্যাতনের শিকার কৃষক এসলাম আলী উপজেলার মুন্নাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

সোহান মাহমুদ/এসআর/এএসএম